ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্থানে শেয়ারবাজার
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে মূল্য সূচক প্রতিনিয়তই সর্বোচ্চ স্থানে উঠে আসছে। রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্থানে শেয়ারবাজার। এদিন শেয়ারবাজারে চার রেকর্ড হয়েছে।
এদিন ব্যাংক, আর্থিক, প্রকৌশল আর বস্ত্র খাতের উপর ভর করে ব্যাপক সূচকের উত্থান হয়েছে। গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৮১ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৮৪২ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। যা সূচকটি ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়ার পর ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্থানে।
এদিন ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেনও বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে ২ হাজার ৭০৬ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি উত্থান হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকেরও। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এযাবতকালের মধ্যে এটি ডিএসই-৩০ সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান।
অপরদিকে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিকে শুধু মূল্য সূচক নয় ডিএসইর বাজার মূলধনও এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এর আগে কখনো ডিএসইর বাজার মূলধন এমন উচ্চতায় ওঠেনি।
ডিএসইতে সূচকের সাথে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। একই সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। ডিএসইতে ২ হাজার ৭০৬ কোটি ৩১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪৮৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ২১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার।
ডিএসইতে ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৪৭টির বা ৬৫.৬৯ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ৯৬টির বা ২৫.৫৩ শতাংশের এবং ৩৩টির বা ৮.৭৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৮.২২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯২১.৪৭ পয়েন্টে। সিএসইতে ৩২৪টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮৩টির আর ২৩টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১০০ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে চাঙ্গা প্রবণতায় এখন দেশের শেয়ারবাজার। প্রতি সপ্তাহেই রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে। পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহেই ফিরছে বিনিয়োগকারীদের খোয়া যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আরও একটি সুখবর দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সর্বোচ্চ ঋণসীমার পরিধি বাড়িয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে ৮ হাজার সূচক পর্যন্ত মিলবে সর্বোচ্চ ঋণ।
বিএসইসির নতুন আদেশে বলা হয়েছে, প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮ হাজার পয়েন্টে না যাওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ১০০ টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮০ টাকার ঋণ সুবিধা বহাল থাকবে। এমন এক সময়ে বিএসইসি পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ ঋণ সুবিধার পরিধি বাড়িয়েছে, যখন বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সব তথ্য দৈনিক ভিত্তিতে জমা দিতে বলেছে। বাজার বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বিএসইসির আগের নির্দেশনাটি বহাল থাকলে সূচক ৭ হাজার পয়েন্ট ছোঁয়ার আগেই ঋণ সমন্বয়ে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। শেয়ার বিক্রির চাপ কমাতে বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অর্থাৎ, ৮ হাজার পয়েন্টে না পৌঁছানো পর্যন্ত শেয়ার বিক্রির চাপ তৈরি হবে না।
এদিকে কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশনাটি যাতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে, সে জন্য সর্বোচ্চ ঋণের পরিধি বাড়িয়েছে বিএসইসি। এর ফলে একদিকে ঋণ সমন্বয়ে জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের চাপ থাকবে না, অপরদিকে সূচকের এই অবস্থায়ও নতুন করে সর্বোচ্চ হারে ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। আবার যারা এরই মধ্যে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলে তারাও ঋণ নিতে পারবেন।