খেলাপি ঋণ সাড়ে ৯ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : ঋণ গ্রহীতাদেরকে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েও খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। সেইসঙ্গে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আগের তিন মাসের তুলনায় তিন হাজার ৮৯৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা বেড়েছে। মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ২৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। বছরের প্রথম ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৭০১ কোটি টাকা।
গত মার্চে খেলাপি ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৭৯ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের তুলনায় গত জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
এর আগে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত বেড়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। গত মার্চে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। খেলাপি ঋণ পরিমাণে বাড়লেও শতকরা হিসাবে সামান্য কমেছে। বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ বাড়ায় শতকরা হিসাবে সামান্য কমেছে।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি কমাতে হলে ঋণের মান বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলোকে সতর্কভাবে ঋণ দিতে হবে। জাল জালিয়াতি বন্ধ করতে হবে। যারা জাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমানে যেসব ঋণ খেলাপি হচ্ছে সেগুলোর প্রায় সবই জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা। সেগুলো পরিশোধের সময় আর শোধ হচ্ছে না। ফলে খেলাপি হচ্ছে। এ ছাড়া করোনার কারণে ব্যবসা বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কিছু ঋণ খেলাপি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনলে ঋণ খেলাপি হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো হবে। খেলাপির দুর্নাম থেকে দেশের ব্যাংকিং খাত রক্ষা পাবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আর্থিক খাত নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। খেলাপি ঋণের কারণে বেড়ে যাচ্ছে দেশের ব্যবসা খরচ।
এদিকে করোনার কারণে খেলাপি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ ছাড় শুরু হয়েছে। প্রথম বছরে সব ঋণেরই ছাড় ছিল। তবে গত ১ জানুয়ারি থেকে সব ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে বড় বড় ঋণের ক্ষেত্রে চলতি আগস্ট পর্যন্ত ওই ছাড় বহাল রয়েছে। এ ছাড়ের পরও ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে। আগস্টের পর ছাড়ের সময়সীমা আর না বাড়ানো হলে খেলাপি ঋণ আগামীতে আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ করোনা পরবর্তীতে ব্যবসা বাণিজ্য এখন স্বাভাবিত গতিতে ফিরে আসেনি। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও