সিলেটের ৭৪ শতাংশ চা বাগান শ্রমিক এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে
অর্থনীতি ডেস্ক : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতিসংঘের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, সিলেটের চা বাগানের প্রায় ৭৪% শ্রমিক এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সম্প্রতি “সিলেট বিভাগে নারী চা বাগান শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি” শীর্ষক ইউএন ওমেন বাংলাদেশের ওয়েবিনারে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, চা বাগানে কর্মরত নারী ও শিশুদের মৌলিক চাহিদার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেট বিভাগের অগ্রগতির ধীরগতির কথাও উঠে আসে গবেষণায়।
ওয়েবিনারে আলোচনার প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে ছিলো জেন্ডার রেসপন্সিভ প্ল্যানিং অ্যান্ড বাজেটিং (জিআরপিবি) এবং চা বাগানের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বিসিএসইউ) সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী জানান, প্রতিটি চা বাগানের শ্রমিক দৈনিক মজুরি হিসেবে মাত্র ১২০ টাকা পান। সরকার এবং চা বাগান মালিকরা এটি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আইন সংস্কার কমিটি চা শ্রমিকদের দাবি শোনেনি। শুধুমাত্র মালিকরা এই ধরনের আলোচনায় উপস্থিত থাকেন।”
ইউএন উইমেন বাংলাদেশের এজেন্সি প্রধান গীতাঞ্জলি সিং অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। চা বাগান শ্রমিকদের কম মজুরির কথা শুনে তিনি হতবাক হয়ে তিনি বলেন, “চা শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো সম্পূর্ণ অমানবিক এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর মানোন্নোয়ন করা প্রয়োজন। আমি বুঝি না কীভাবে মালিকরা প্রতিদিন চা শ্রমিকদের ১১৭-১২০ টাকা দিতে পারে।” চা বাগানের শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে জাতিসংঘের যৌথ কর্মসূচির আওতায় সিলেট বিভাগে জিআরপিবি নিয়ে দুটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এবং পরেরটি ২০২১ সালের মার্চে।
নারী শ্রমিকরা মাসিক ঋতুস্রাব, মাতৃত্ব এবং সন্তান পরিচর্যার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সমস্যার শিকার হয়। কর্মসূচিতে দেখা যায়, তারা বৈরী প্রতিকূল আবহাওয়ায় দিনে ৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাজ করে। পক্ষান্তরে বিশ্রাম ও পরিচ্ছন্নতার সুযোগ সীমিত। এছাড়া, চা বাগানের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ, যৌতুক এবং পারিবারিক সহিংসতাও নৈমিত্তিক ঘটনা।
তবে সরকারি কর্মকর্তারা এই গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে একমত নন। বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের শ্রম স্বাস্থ্য ও কল্যাণ উপকমিটির আহ্বায়ক তাহসিন আহমেদ চৌধুরীর মতে, বিবিএস-ইউনিসেফের তথ্যে ব্যাপক অসঙ্গতি রয়েছে। তার দাবি, মজুরি হিসেবে শ্রমিকদের প্রতিদিন ৩০০ টাকার বেশি দেওয়া হয়ে থাকে। পাশাপাশি চা বাগানে লিঙ্গবৈষম্যের ব্যাপারেও দ্বিমত পোষণ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, “বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী চা বাগান এলাকায় ৯০-৯৩টি সম্প্রদায় রয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে তারা আমাদের চেয়ে ২০ বছর কম বাঁচে, যা সত্যিই খুব মর্মান্তিক। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবিকার দিকে মনোযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের সরকারের আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. নায়েব আলী জানান, মন্ত্রণালয় চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও আবাসনের ব্যবস্থা করার কথা বললেও চা বাগানের নেতারা জানান তাদের কাছে এমন কোনো নথিপত্র নেই।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (এমডব্লিউসিএ) উপ -সচিব (বাজেট ও নিরীক্ষা) ফেরদৌসী বেগম বলেন, “২০২৫ সালের মধ্যে আমরা দুর্বল সম্প্রদায়ের সব গর্ভবতী মায়েদের সহায়তা করতে চাই।” সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন, বার্তা২৪। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত।