তালেবানের বার্ষিক আয়ের ৬০ শতাংশ আসে আফিম থেকে
অর্থনীতি ডেস্ক : পপি গাছের ফল থেকে পাওয়া নির্যাস আফিম থেকে বেশ কিছু মাদক তৈরি হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলো হেরোইন। বিশ্বে আফগানিস্তানেই সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হয়। বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৮০ ভাগই এই দেশটি থেকে আসে বলে তথ্য জাতিসংঘ মাদক সংক্রান্ত অপরাধ দমন সংস্থা ইউএনওডিসির।
জাতিসংঘের এ সংস্থাটি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে ১১ শতাংশ অবদান এই আফিমের। তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আফগানিস্তানে আফিম চাষের কী হতে পারে, তার খবর জানাচ্ছে বিবিসি। ক্ষমতা দখলের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
দুই দশক বাদে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখন কোনো মাদকের চাষ হতো না। আমরা আবারও আফিম চাষ শূন্যে নামিয়ে আনব।
মাঠের চিত্র যে তা বলছে না, তা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যে। তাতে দেখা যায়, তালেবান শাসনের শুরুতে আফিম চাষ বেড়েছিল। ১৯৯৮ সালে যেখানে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে পপি চাষ হচ্ছিল, ২০০০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪ হাজার হেক্টর।
আর এই আফিম চাষের বেশিরভাগ জমিই তালেবান নিয়ন্ত্রিত হেলমান্দ প্রদেশে। বিশ্বের মোট আফিমের ৩৯ শতাংশের জোগানই আসে এই অঞ্চল থেকে।
কিন্তু ২০০০ সালের জুলাই মাসে তালেবান পপি চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তার বেশ ভালো প্রভাব পড়েছিল বলে ২০০১ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনেও স্বীকার করা হয়।
ঐ নিষেধাজ্ঞার পর ২০০১ ও ২০০২ সালে বিশ্বে হেরোইন আটকের ঘটনা বেশ কমে গিয়েছিল। তবে এরপর পরিস্থিতি তেমন থাকেনি। ২০০১ সালে তালেবান শাসন অবসানের পর পপি চাষ অন্য সব স্থানে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও হেলমান্দ প্রদেশ ছিল ব্যতিক্রম।
কাবুল থেকে উৎখাত হলেও তালেবানের নিয়ন্ত্রণে থাকা দক্ষিণ আফগানিস্তানের এই প্রদেশটিতে ২০২০ সালেও অধিকাংশ জমি পপি চাষের জন্যই ব্যবহার হচ্ছিল।
আফগানিস্তানে কর্মসংস্থানের একটি বড় ক্ষেত্রে হচ্ছে পপি ক্ষেত। ইউএনওডিসির এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে পপি থেকে আফিম তৈরিতে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ কাজ করেছিল।
আফিস চাষ কীভাবে তালেবানের তহবিল ভারী করছে, তা উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে। তারা বলছে, তালেবান চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কর তো নেয়ই, আবার মাদক পাচার থেকেও আয় করে।
বলা হয়, আফিম চাষিদের ১০ শতাংশ করে কর দিতে হয়। এরপর আফিম থেকে হেরোইন তৈরি হয় যে কারখানায়, সেখান থেকেও কর তোলা হয়। এরপর পাচারের অর্থেও ভাগ বসায়।
এক হিসাবে দেখা যায়, এই মাদক কারবার থেকে তালেবান বছরে ১০ থেকে ৪০ কোটি ডলারের মতো অর্থ আয় করে।
আর তা তালেবানের মোট বার্ষিক আয়ের ৬০ শতাংশ, বলছেন আফগানিস্তান পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালনকারী যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্মকর্তা জেনারেল জন নিকোলসন।
অবৈধ মাদক বাণিজ্য নিয়ে গবেষণাকারী ডেভিড ম্যান্সফেল্ডেরে মতে, আফিমের কর পদ্ধতি নিয়ে জাতিসংঘ ও অন্যরা যা বলছে, তা বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি বলেন, আফিম চাষ থেকে বছরে কর আসতে পারে বড়জোর ৪ কোটি ডলার। আফগানিস্তানে পপি ক্ষেত ধ্বংস করছে এক মার্কিন সৈন্য।
আফগানিস্তানে আফিম থেকে যে হেরোইন উৎপাদিত হয়, তার ৯৫ শতাংশই যায় ইউরোপে। যুক্তরাষ্ট্রের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মাদকের মাত্র ১ শতাংশ যায় আফগানিস্তান থেকে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মাদকের মূল উৎস পাশের দেশ মেক্সিকো।
২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে আফিম মূলত সড়ক পথেই পাচার হত। ৯০ শতাংশ মাদকই যেত স্থলপথ দিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি ভারত মহাসাগর দিয়ে জলপথেও আফিম পাচারের নতুন রুট তৈরি হয়েছে। আফগানিস্তানে আফিম চাষ বেড়ে যাওয়ার পর গত দুই দশকে বিশ্বে মাদক দমন অভিযানে আফিম উদ্ধারের ঘটনাও বেড়েছে।
তবে মাদক ধরা কিংবা পাচারকারীদের গ্রেপ্তার আফগানিস্তানে আফিম চাষের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৮ সালে যে পরিমাণ আফিম জব্দ হয়েছে, তা আফগানিস্তানে মোট উৎপাদনের মাত্র ৮ শতাংশ। সূত্র : বিবিসি, বিডিনিউজ