দেশের ২৯.১% নারী অবৈতনিক শ্রমিক; উপার্জন সুবিধার বাইরে ৩৪.৮৪% নারী নারী কর্মসংস্থান ১% বাড়লে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে দশমিক ৩১%
সোহেল রহমান : দেশে নারী কর্মসংস্থান ১ শতাংশ বাড়লে কার্যকরভাবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হতে পারে দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ১০ শতাংশ নারীর কর্মসংস্থান বাড়লে দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হতে পারে অতিরিক্ত ১ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। যদিও জিডিপি-তে নারী বা পুরুষের কর্মসংস্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন সম্পর্ক নেই।
রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সানেম’ ও ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ’-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ভূমিকা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
ওয়েবিনারে বলা হয়, ১৫-৪৯ বছর বয়সী পুরুষদের ৮১.৯ শতাংশ উপার্জন করলেও মাত্র ৩৪.৪ শতাংশ মহিলা একই কাজ করে। এছাড়া উপার্জনকারী সুবিধাভোগী এবং সুবিধা ভোগ করেন না এরকম নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪.০১ শতাংশ এবং ৩৪.৮৪ শতাংশ। বাংলাদেশে মজুরি কর্মসংস্থানের আওতায় ৪২.৬ শতাংশ পুরুষের বিপরীতে রয়েছেন ৩১.২ শতাংশ নারী, আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ৫২.৫ শতাংশ পুরুষের বিপরীতে রয়েছে ৩৯.২ শতাংশ নারী। অবৈতনিক শ্রমের দিক থেকে নারী-পুরুষের মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যবধান। কেবল ৪.২ শতাংশ পুরুষের বিপরীতে দেশের প্রায় ২৯.১ শতাংশ নারী অবৈতনিক শ্রমের আওতাধীন
ওয়েবিনারে জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। আর সেক্ষেত্রে নারীরর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন একটি অপরিহার্য কৌশল হিসেবে কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, যদিও সরকার, বিভিন্ন এনজিও ও উন্নয়ন সহযোগী আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু লিঙ্গ সমতার প্রসারে নানা স্বীকৃতি পেলেও নারীকে শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ ও আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ঘরে-বাইরে সব জায়গায় নানারকম বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এ সীমাবদ্ধতাগুলি কাটিয়ে ও অর্থনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বৈচিত্র্য এবং বৈষম্য হ্রাসের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, আমাদের দেশ এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি করেছে তা ধরে রাখতে ব্যাষ্টিক স্তরের প্রকল্পগুলোকে সামষ্টিক স্তর থেকে সমর্থন করা উচিত। বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারি সংস্থা এবং নীতি নির্ধারকদের আগ্রহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সানেমের পক্ষ থেকে সরকারের উদ্দেশ্যে দেয়া সুপারিশের মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার কমাতে বৃত্তি প্রদান, প্রজনন স্বাস্থ্য, লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলোর ব্যাপারে আরো সংবেদনশীল পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, উপজেলা পর্যায়ে পরিবার কাউন্সেলিং এর জন্য নীতি প্রণয়ন, যানবাহনে নারীর সুরক্ষা ছাড়াও কোন প্রতিষ্ঠান নারীবান্ধব কর্মসূচি নিলে তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা যেমন কর ছাড়ের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া উন্নয়ন সহযোগী বা দাতা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রকল্পে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা এবং নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে পুরুষের সংবেদনশীলতার বিষয়টি থাকতে হবে। এছাড়াও সানেম মনে করে প্রাইভেট সেক্টর সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে সাপ্লাই চেইনে নারীদের সংযোজন করে।
মুক্ত আলোচনায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. নুরুন নাহার ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে বলেন, সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এবং এমনভাবে প্রকল্পগুলো ডিজাইন করা যেতে পারেÑ যা নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সাহায্য করবে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে।
কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও বলেন, নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সুযোগকে আরও বিস্তৃত করার জন্য সামাজিক মূলধনের গুরুত্বের দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
সমাপনী বক্তব্যে সুরেশ বার্টলেট বলেন যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সর্বোচ্চ স্তরে নারী নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও আমরা এখনও জেন্ডার সমতা অর্জনে অনেক পিছিয়ে আছি। তিনি বলেন, যে এই বিষয়ে আরও গবেষণা করা উচিত এবং এই জাতীয় গবেষণার ফলাফলগুলো একটি সামষ্টিক স্তরে বাস্তবায়িত হওয়া উচিত।