এখন থেকে অগ্রিম টাকা নিতে পারবে না কোনও ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান
মাসুদ মিয়া : পণ্য দেওয়ার আগেই গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো ধরনের অগ্রিম মূল্য সরাসরি নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে নিতে পারবে না ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ঝুঁকি বিবেচনায় যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করে লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অগ্রিম টাকা নিয়ে দীর্ঘদিনেও পণ্য বা সেবা সরবরাহ করছে না। এ নিয়ে নানা বিতর্কের মুখে গত জুনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশিকা জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঐ নির্দেশনার আলোকে একটি সার্কুলার জারি করেছিল।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি গ্রাহকের টাকা জমা না নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। কিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য ও সেবার জন্য সরাসরি অগ্রিম অর্থ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে ব্যাংকসহ পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে রোববার একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটা ভালো উদ্যোগ। আমাদের দেশে লোকজনতো এই রকমভাবে প্রতারণা করে। অগ্রিম টাকা নিলো, জিনিস দিলো না। এরকম কয়েকটা ঘটানা ঘটেছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে।
তিনি আরও বলেন, আশা করা যায় গ্রাহকরাও এখন আরো সচেতন হবে। দুই একজনের বিরুদ্ধে একশন হলে অন্যরাও সচেতন হবে।
একইসঙ্গে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার পর টাকা নেওয়া সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটিও বাস্তবায়ন হলে প্রতারণার ঘটনা আরও কমবে বলে আশা করেন এই অর্থনীতিবিদ।
এদিকে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অগ্রিম টাকা নিয়ে দীর্ঘদিনেও পণ্য বা সেবা সরবরাহ করছে না। এ নিয়ে নানা বিতর্কের মুখে গত জুনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশিকা জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঐ নির্দেশনার আলোকে একটি সার্কুলার জারি করেছিল।
সার্কুলারে বলা হয়েছিল, পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ নিজস্ব সেটেলমেন্ট হিসাবে ধারণ করবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহের পর দাম পাবে। লেনদেন নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যাংক, এমএফএস বা ই-ওয়ালেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারবে।
রোববার ‘ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে ক্রেতার কাছ হতে সরাসরি অর্থ জমা গ্রহণ না করা’ শীর্ষক নতুন সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সরকারের জারি করা ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এড়ানোর জন্য কিছুসংখ্যক ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে গ্রাহক হতে পণ্য/ সেবা মূল্যের অগ্রিম অর্থ সরাসরি গ্রহণ করছে।
এ পরিস্থিতিতে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে নিচের দুটি নির্দেশনা দেয়া হলো-
সরকারের ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ এর নির্দেশনা অমান্য করে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কোম্পানি বা কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে পণ্য/ সেবা মূল্যের অগ্রিম বাবদ অর্থ সরাসরি জমা গ্রহণ করা যাবে না।
এরূপ ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রদত্ত ট্রানজেকশন প্রোফাইলের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই, লেনদেনের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ এবং সামগ্রিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করে লেনদেন পরিচালনা করতে হবে।
গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের পণ্য বা সেবা বুঝিয়ে না দিয়ে বিক্রয় মূল্য পাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি পণ্য ৫ দিন এবং অন্যান্য পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ হবে ৭ দিনের মধ্যে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ক্রেতা পণ্য হাতে পাওয়ার পরই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অর্থ পরিশোধ হবে।
দেশের সব ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস), পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ও পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরগুলো (পিএসও) ডিজিটাল কমার্স লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্য-সেবার বিপরীতে গ্রাহকের পরিশোধ করা অর্থ কীভাবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট) পেমেন্ট করবে, তার নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রেতাদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ই-কমার্স ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ক্রম বিকাশমান ডিজিটাল কমার্সের মূল্য পরিশোধে ব্যাংক, পিএসও এবং ই-ওয়ালেট ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়েও অনেক ক্ষেত্রেই পণ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে বা পণ্য পাচ্ছেন না। বিধায় গ্রাহক ও পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, যা ডিজিটাল কমার্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, পণ্য ডেলিভারির আগে টাকা পাবে না ইভ্যালির মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।
ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ঐ পণ্যের পেমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। এ জন্য পণ্য অর্ডারের বিপরীতে পরিশোধিত টাকা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সরকার অনুমোদিত মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা জমা থাকবে। এর আগে, গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় জানায়, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের পণ্য বা সেবা বুঝিয়ে না দিয়ে বিক্রয় মূল্য পাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি পণ্য ৫ দিন ও অন্যান্য পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ হবে ৭ দিনের মধ্যে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই পণ্য হাতে পাওয়ার পর ক্রেতা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অর্থ পরিশোধ করবেন।