পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩,২২৭ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ও জনতা লক্ষ্যমাত্রার অধিক পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। অন্যদিকে পরিচালন মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে অগ্রণী, রূপালী ও বিডিবিএল। আর একমাত্র লোকসানী ব্যাংক হচ্ছে বেসিক ব্যাংক।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও ব্যাংকগুলো সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট পরিচালন মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে পাঁচটি ব্যংক মোট পরিচালনা মুনাফা অর্জন করেছে ৩ হাজার ২২৭ কোটি ১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সার্বিকভাবে পাঁচটি ব্যাংকের মোট পরিচালন মুনাফা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। অন্যদিকে ১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেসিক ব্যাংক লোকসান দিয়েছে ৩১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা এবং ৮০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক ৮৬৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে।
অন্যদিকে ৭০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক ৫৪৫ কোটি টাকা; ৩০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক ১০৯ কোটি টাকা এবং ৬০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিডিবিএল ৪৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, সার্বিকভাবে পাঁচটি ব্যাংক সমাপ্ত অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিচালন মুনাফা অর্জন করলেও এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর মোট পরিচালন মুনাফা কমেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যংক মোট পরিচালনা মুনাফা অর্জন করেছিল ৪ হাজার ৫৭২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা কমেছে ১ হাজার ৩৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসিক ব্যাংকের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরে সাড়ে ৬ কোটি টাকা লোকসান কমিয়ে এনেছে ব্যাংকটি।
এদিকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের কারণে পরিচালন মুনাফার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর নীট মুনাফার পরিমাণ অতি সামান্য। সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংকের নীট মুনাফার পরিমাণ হচ্ছে ৩১১ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই ব্যাংকগুলোর নীট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩৯০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এছাড়া কোনো নীট মুনাফা নেই বিডিবিএল-এর এবং লোকসানে রয়েছে বেসিক ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক ১৫০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৪০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৭৬ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংক ৪৫ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন করেছে।
এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) ব্যাংকগুলোর নীট মুনাফার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৯৫ কোটি টাকা, ৩২ কোটি টাকা, ১০২ কোটি টাকা ও ৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
এদিকে চলতি অর্থবছরে ছয়টি ব্যাংককে ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা এবং ৪১৬ কোটি নীট মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের তুলনায় যথাক্রমে ১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা এবং ১০৫ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংক-কে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা ও ২০০ কোটি টাকা নীট মুনাফা; জনতা ব্যাংক-কে ৯০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা ও ৪৫ কোটি টাকা নীট মুনাফা; অগ্রণী ব্যাংক-কে ৮০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা ও ১০৫ কোটি টাকা নীট মুনাফা, রূপালী ব্যাংক-কে ৩০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা ও ৬০ কোটি টাকা নীট মুনাফা; বিডিবিএল-কে ৬০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা ও ৫ কোটি টাকা নীট মুনাফা এবং লোকসানী বেসিক ব্যাংক-কে ৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা ও ১ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন করতে বলা হয়েছে।