শেয়ারবাজারে রেকর্ডের পর রেকর্ড
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার সূচকের ব্যাপকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ও বাজার মূলধনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এদিন ডিএসইতে চার রেকর্ড হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি চলে এসেছে। আর ১৯ পয়েন্ট বাড়লে ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ হাজার পয়েন্টে দাঁড়াবে। এর আগের দুই কার্যদিবসও শেয়ারবাজার ব্যাপক সূচক বৃদ্ধি পায়। গতকাল অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দও বেড়েছে পাশাপশি লেনদেন ও সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইর লেনদেন ২৪০০ কোটি টাকার উপরে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৯৮১ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। যা সূচকটি ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়ার পর ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্থানে। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি উত্থান হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকেরও। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এযাবতকালের মধ্যে এটি ডিএসই-৩০ সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। অপরদিকে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিকে শুধু মূল্য সূচক নয় ডিএসইর বাজার মূলধনও এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এদিন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতসহ বেশিরভাগ খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে।
এদিন লেনদেনের শুরুতেই সূচকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে সূচকের বড় উত্থান হয়। সেই সঙ্গে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৫টির। আর ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবকটি মূল্য সূচকের উত্থানের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৪৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় দুই হাজার ৩৬৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১০৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ৫৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জিপিএইচ ইস্পাত, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, অ্যাক্টিভ ফাইন, পাওয়ার গ্রীড, আইএফআইসি ব্যাংক এবং এসএস স্টিল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৫টির এবং ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অধ্যাপক শিবলীর কমিশন গত বছরের মে মাসে কমিশনের দায়িত্বভার গ্রহন করে। যখন করোনা ভাইরাস আতঙ্কে মানুষের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে ছিল ভীষণ ভয়। তবে কমিশন নানামূখী কার্যকর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই ভয় কাটিয়ে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ভূমিকা রাখেন। যার নেতৃত্বে বাজারে এখন অংশগ্রহন অনেক বেশি এবং মূল্যসূচক উঠে এসেছে এক অনন্য উচ্চতায়। বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বর্তমান কমিশন নানা কার্যকরি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে শেয়ারবাজারে অংশগ্রহন বেড়েছে এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।