আবারও ইতিবাচক ধারায় তৈরি পোশাক খাত
মো. আখতারুজ্জামান : করোনার প্রভাবে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাইনাস ১.২৭ শতাংশ। আর এই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে ভিয়েতনাম। যেখানে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে ২য় অবস্থানে ছিলো সেখানে এখন ভিয়েতনাম। আর বাংলাদেশের অবস্থান চলে গেছে ৩য় স্থানে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধের কারণে জুলাইয়ে ধস নেমেছিল পোশাক রপ্তানিতে। গত এক মাসে সেখান থেকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আগস্টেই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে খাতটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে পোশাক খাত করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে যাতে খুব শিগ্রিই আবারও ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে ২য় স্থানে চলে আসবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, করোনার শুরু থেকেই সরকার আরএমজি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সরকার প্রথমই এই খাতের জন্য প্রণোদনা ঋণের ব্যবস্তা করে। আগে যে লকডাউনগুলো দেয়া হয়েছিলো সে সময় এই খাতের উৎপাদন বন্ধ ছিলো না। সর্বশেষ যে লকডাউন দেয়া হয় তা বিভিন্ন মহলের চাপে কিছু দিন পোশাক তৈরি কারখানা বন্ধ রাখা হয়। তবে সেই চাপ উপেক্ষা করে এই খাতকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়। সেই ফল এখন আসতে শুরু করেছে। আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই খাত।
তিনি বলেন, আরএমজি খাতের ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রণোদানা ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে এটা আসল সমাধান নয়। এটা দীর্ঘ মেয়াদি আওয়া উচিৎ। ৫ বছর না হলেও যেন তিন বছর করা হয়। এতে করে ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে তিনি মনে করে।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশ করে। তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনার প্রথম ধাক্কার চেয়ে দ্বিতীয় ধাক্কা তুলনামূলক ভালোভাবে মোকাবেলা করেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। তবে এসময় যারা চাকুরি হারিয়েছে তাদের অনেকে এখনও চাকুরি পায়নি। এছাড়া অনেকের বেতন এবং ওভারটাইমের আয় কমেছে।
বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, গত বছরের একই মাসের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসব্যাপী মোট ২৭৫ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের আগস্টে যা ছিল ২৪৬ কোটি ডলার।
দেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, জুলাই মাসে ঈদুল আজহা পালিত হওয়ার কারণেই আগস্টে এসে রপ্তানি বেড়েছে। সাধারণত ঈদের মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কম হয়, তখন ওই মাসে যে চালান জাহাজীকরণ হওয়ার কথা তা পরের মাস পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। তাই জুলাইয়ে মাইনাস ১১ দশমিক ০২ শতাংশের যে প্রবৃদ্ধি হয়, আগস্টে এসে তা পূরণ হয়েছে। তবে জুলাই-আগস্টে আরএমজি পণ্যের গড় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি মাইনাস ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, গত দুই মাসে রপ্তানির আনুষ্ঠানিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমরা ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ পিছিয়ে আছি। এদিকে উভেনের ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশের তুলনায় বরাবরের মতোই ভালো করছে নিটওয়্যার খাত। গত মাসে খাতটি ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লাভ করে। অবশ্য নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধির পেছনে মূলত সুতার দর বৃদ্ধি অবদান রাখে বলে জানান রুবেল।