জিডিপি’র তুলনায় বৈদেশিক ঋণের স্থিতির হার বেড়েছে
সোহেল রহমান : প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অর্থের কার্যকর ব্যবহারে সক্ষমতার ঘাটতির কারণে বৈদেশিক সহায়তার যথাযথ ব্যবহার হয় না। এছাড়া পাইপ-লাইনে জমা হওয়া বৈদেশিক সহায়তার অর্থও কাঙ্খিত পরিমাণে ছাড় হয় না। দেশে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ চারটি বিষয়কেই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করছে ‘অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ’ (ইআরডি)।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ)-তে ইআরডি’র নিজস্ব পর্যবেক্ষণে এসব সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া আরও চারটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। এগুলো হচ্ছেÑ নিজেদের অগ্রাধিকার ও আর্থিক বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহ করা; সহজ শর্তের (নমনীয়) বৈদেশিক ঋণ ও উৎসের সঙ্কোচন; কোভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবেলায় বর্ধিত অর্থায়ন চাহিদা সংগ্রহ এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়াকালীন চ্যালেঞ্জ।
ইআরডি জানায়, বৈদেশিক সহায়তার সংগ্রহের উৎস বহুমুখীকরণের প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যে বর্তমানে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি), ‘সাউথ-সাউথ কর্পোরেশন’ ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে চিহ্নিত সমস্যাগুলো দূরীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে ৩৪টি ত্রৈ-মাসিক ত্রি-পক্ষীয় সভার আয়োজন এবং সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।
ইআরডি’র প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায়, সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি’র তুলনায় বৈদেশিক সহায়তার প্রত্রিশ্রুতি ও ছাড়ের হার কমেছে। গত অর্থবছরে এ হার ছিল যথাক্রমে ১.৬ শতাংশ ও ২.২ শতাংশ। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ হার ছিল যথাক্রমে ২.৯৭ শতাংশ ও ২.২৪ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরে জিডিপি’র তুলনায় বৈদেশিক ঋণের স্থিতির হার সামান্য বেড়েছে। এটি এখন দাঁড়িয়েছে ১৩.৪৮ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ হার ছিল ১৩.৩৬ শতাংশ।
এদিকে গত অর্থবছরে মোট ৪৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের সম-পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির পাওয়া গেছে এবং এর বিপরীতে অর্থ ছাড় হয়েছে ৪৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ছিল ৯৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং অর্থ ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৭২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
ইআরডি’র তথ্য মতে, সমাপ্ত অর্থবছরে অর্থ ছাড়ের পরিমাণ এর আগের অর্থবছরের তুলনায় কমলেও পাইপ-লাইনে জমা থাকা বৈদেশিক সহায়তার অর্থের তুলনায় অর্থ ছাড়ের হার বেড়েছে। ২০২০-২১ বছরে অর্থ ছাড়ের হার দাঁড়িয়েছে ১৬.৫৮ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ হার ছিল ১৫.৬২ শতাংশ।
ইআরডি জানায়, এপিএ’র আওতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থাটিকে ৭০টি বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ৬০০ কোটি ডলা ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায় এবং ৫৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার বৈদেশিক সহায়তা ছাড় করতে হবে। এছাড়া কোভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবেলায় অর্থায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এ খাতে ১০০ কোটি ডলারের সম-পরিমাণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে বৈদেশিক ঋণ ও সুদ বাবদ চলতি অর্থবছরে ২১৫ কোটি ডলার পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।