ট্রিলিয়ন ডলারের খরচ বাঁচাতেই যুদ্ধ থেকে সরে এলেন বাইডেন
রাশিদ রিয়াজ : আর কোনো দেশকে ‘সংশোধন’ করতে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেজিম চেঞ্জ’ নীতির বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে। আফগানিস্তানে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে চরম শিক্ষার কারণে আর কোনো দেশকে ‘সংশোধন’ করতে যুদ্ধে জড়াবে না দেশটি। দেশটির পররাষ্ট্রনীতি এরকম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় রক্তপাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দায় নিজের কাঁধে নিয়ে তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন যুগের সূচনা ঘটবে, যেখানে সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। সিএনএন
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে অন্যদেশের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া বা রেজিম চেঞ্জ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনলেন যখন ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের হিসেবে পারমানবিক দ্বন্দ্বে বিশ^ অর্থনীতিতে ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার। ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার এবং এরফলে যে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাতে আরো ১০ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সাবেক বুশ প্রশাসন মার্কিন নাগরিকদের আশ^াস দিয়ে বলেছিল ইরাক যুদ্ধের খরচ ৫০ থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার দাঁড়াবে।
কিন্তু ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্টের হিসেব বলছে নাইন/ইলেভেন পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল বা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হয়েছে ৫.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। যা বুশ প্রশাসনের সম্ভাব্য ব্যয়ের ১শ গুণেরও বেশি। অর্থসম্পদ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের এধরনের রেজিম চেঞ্জ প্রকল্পের যুদ্ধে উভয় পক্ষে যে প্রাণহানি ও মানবসম্পদের অপচয় হয় তা অবর্ণনীয়। ইরানে রেজিম চেঞ্জ প্রকল্পে প্রয়োজনে যুদ্ধ বাঁধলে ট্রাম্প প্রশাসন বা তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছিলেন সম্ভাব্য ইরান যুদ্ধের খরচ কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। লাখ দুয়েক মানুষ মারা যাবে। এসব হিসেবে দিয়ে পম্পেও ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করে দেন।
কার্যত এর পরই ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার কারণে মার্কিন বিমান তৈরি কোম্পানি বোয়িং ইরানের কাছে ২০ বিলিয়ন ডলারের মূল্যের বোয়িং বিমান বিক্রি করতে পারেনি। কিউবার বিরুদ্ধে গত ৬০ বছর ও ইরানের বিরুদ্ধে গত ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। এতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বৃদ্ধি, গ্যাস পাম্পের উচ্চ মূল্য, অভ্যন্তরীণ পর্যটন এবং ভ্রমণে সম্ভাব্য হ্রাসের কারণে মার্কিন অর্থনীতির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন হিসেব করে দেখেন কোনো দেশে রেজিম চেঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরের পর বছর খরচ মিলিয়ন থেকে বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। সিরিয়ায় ৫শ মডারেট যোদ্ধার পেছনে প্রশিক্ষণ ব্যয় দাঁড়ায় ৫’শ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ইরানে এধরনের হামলার জন্যে একটি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে খরচ করতে হবে কয়েক বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ায় দু’বার যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এবং ইরানে একই ধরনের হামলার ব্যয় দাঁড়াবে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস বিরোধী অভিযানে দিনে বোমা বর্ষণে মার্কিনীদের খরচ দাঁড়ায় ৮.৩ মিলিয়ন ডলার। যা বছরে দাঁড়াবে ৩ বিলিয়ন ডলার। ৯০ দশকে ইরাকে মার্কিন বোমা বর্ষণের খরচ হিসেব বিবেচনা করলেও তা বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায় এবং এধরনের পুরোদমে কোনো দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন বা যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে তার খরচ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত গড়ায়।
এজন্যেই হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা পরিবর্তনের এটাই সময়। এ সিদ্ধান্ত শুধু আফগানিস্তান নিয়েই নয়, এটা অন্য দেশ পুনর্গঠনে বৃহৎ পরিসরে সামরিক অভিযান চালানোর যুগেরও সমাপ্তি।
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত যথাযথ ছিল দাবি করে জো বাইডেন বলেন, এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের হওয়া চুক্তির আওতায় পাঁচ হাজার তালেবান বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে তালেবানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডাররাও ছিলেন। তারাই আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন।