প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খুব কম ভালো প্রতিষ্ঠান বেশি, ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল বাংলাদেশে
ভূঁইয়া আশিক রহমান : ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক, অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, দেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ ভালো। কারণ এখন মানুষ অনলাইনভিত্তিক কেনাবেচায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। মুঠোফোনে সার্চ দিয়ে সবকিছু কেনা যায়, পণ্যের মান ও মূল্য সম্পর্কে জানা যায়, ফলে সচেতন বহু মানুষ ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছেন। ই-কমার্স বিশাল মার্কেট। এরই মধ্যে অনেক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। কিছু কিছু প্রতারকও আছে, যাদের কারণে অনেক ভোক্তাকে ঠকতে হচ্ছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জের ঘটনার দায় কেবল কতিপয় কথিত উদ্যোক্তরই নয়, ভোক্তাদেরও আছে। তাদের লোভী মনও দায়ী। বাজার থেকে অর্ধেক মূল্যে কেউ পণ্য দিতে চাইলে আপনি গ্রহণ করতে যাবেন কেন? চিন্তা করবেন না, এতো কম মূল্যে কীভাবে তারা পণ্য দেবে? লোভ করে তারাই প্রতারিত হয়েছেন। যারা একশ টাকার জিনিস পঞ্চাশ টাকা পেয়ে অ্যাডভান্স দিয়ে দেন, তারাও দায় এড়াতে পারেন না। লোভী ক্রেতা তারা। লোভী ক্রেতার সংখ্যা যতো বেশি হবে, প্রতারকদের জন্য ততো সুবিধা হবে।
ঢাবির মার্কেটিংয়ের এই শিক্ষকের মতে, প্রতারক ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের মনস্তাত্ত্বিক একটা ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনতে হবে। ই-কমার্সের জন্য যেসব নিয়মকানুন দরকার ছিলো, তা খুব দুর্বল। এজন্য তারা ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করতে পেরেছে বা টাকা নিয়ে ভেগেছে। তবুও ই-কমার্সই হচ্ছে ভবিষ্যৎ। আগের দিন আর ফিরে আসবে না। সবকিছু অনলাইনে হবে। ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার বিশ^ব্যাপী ঘটছে, আমাদের দেশেও ঘটবে।
এখানে সরকারের দায় কী? যেকোনো নতুন কিছু গড়ে উঠলে প্রতারক শ্রেণি গড়ে ওঠে। এর আগে এমএলএম নামে একটা ব্যবসা মালয়েশিয়া থেকে নিয়ে এসেছিলো এক প্রতারক, এতে বহু মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। একই জিনিস জায়গায় জায়গায় ক্ষুদ্রঋণের নামে প্রতারণা চলছে। এসব প্রতারণা বিষয়গুলো সরকারের নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। কারণ মানুষকে প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। ই-কমার্স যেন দেশে ভালোভাবে সম্প্রসারণ করতে পারে, যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
ড. মীজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ই-কমার্স বিষয়ে। ই-কমার্সের কোনো পণ্যের দাম অগ্রিম মূল্যে পরিশোধ করা যাবে না। পণ্য পেয়ে দাম পরিশোধ করবেন ক্রেতা। পণ্যের অগ্রিম মূল্য দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা থাকবে। ক্রেতা পণ্য বুঝে পাওয়ার পরই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে যাবে টাকা। এটা খুব ভালো একটা ব্যবস্থা। ক্রেতাদের সতর্ক করতে হবে, যেন পণ্য বুঝে পাওয়ার আগে অর্থ পরিশোধ না করেন।
ক্রেতাদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়নি। প্রকৃত ক্রেতারা জানেন, ই-কমার্সের মাধ্যমে কীভাবে পণ্য কিনতে হয়। সত্য-মিথ্যা তারা বুঝতে পারেন। পণ্যের দাম কতো ক্রেতারা জানেন। অনেক ভালো ভালো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো ভালো করছে। প্রতারকের সংখ্যা খুব কম। প্রতারিত লোভী ক্রেতার সংখ্যাও অনেক কম। এখন যেহেতু আগে টাকা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই, ফলে ক্রেতার প্রতারিত হওয়ারও সুযোগ নেই। সাময়িকভাবে আস্থা নষ্ট হলেও তা ফিরে আসবে।