মো. আখতারুজ্জামান ও লিহান লিমা : ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ কোটির বেশি এশিয়ান বিশ্বের মধ্যবিত্ত শ্রেণির খাতায় নাম লেখাবে। মহামারী যে বিশ্ব অর্থনীতির বিরাট জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনে একটি অস্থায়ী বিরতি রেখেছে তা প্রমাণিত হবে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাব। তাদের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে বলে ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিম্নবিত্তদেরকে মধ্যবিত্তের কাতারে নিয়ে আসার জন্য দেশের অর্থনীতিতে যে অসমাতা রয়েছে সেটা দুর করতে হবে। আর এটা দুর করা গেলে মধ্যবিত্তের সংখ্যা আরও বাড়বে।
ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাবের মতে, মধ্যবিত্ত পরিবার বলতে বুঝানো হয়েছে যে যাদের মাথাপিছু খরচ প্রতিদিন ১১ থেকে ১১০ ডলার। এই পরিবারের সংখ্যা ২০২১ সালে প্রায় ৩৭৫ কোটির মতো। মধ্যবিত্ত পরিবার ভারত এবং চীনের মতো জনবহুল দেশগুলোতে আরও বাড়তে থাকবে। এতে বলা হয় ১০০ কোটি নতুন মধ্যবিত্তের মধ্যে তিন চর্তুথাংশই হবে এই দেশগুলোর। ভারত এবং চীনের মতো জনবহুল দেশগুলোর বাহিরেও আগামী দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্তের হার সর্বাধিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এদের বেশিরভাগই এশিয়ার দেশগুলোতে হবে। ২০৩০ সালে রাশিয়া ও জাপানকে পেছনে ফেলে চতুর্থ বৃহত্তম মধ্যবিত্ত শ্রেণির দেশ হতে পারে ইন্দোনেশিয়া।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ জানান, মানুষের আয় এখন বৃদ্ধি পেয়েছে। আনুষ্ঠানিক খাতে ধীরে ধীরে হলেও কর্মসংস্থান বাড়ছে। আগামী ১০ বছরে শক্তিশালী গ্রোথ ও আয়ের প্রবৃদ্ধি বজায় থাকবে। আর দুটির প্রবৃদ্ধি সমান তালে বজায় থাকলে দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়বে। সেই হিসেব বলা যায়, আগমাী ১০ বছর শেষে আমাদের মোট জনসংখ্যার ২০-২৫ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্তের ঘরে চলে যাবে।
মাশরুর রিয়াজ বলেন, মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়লে দেশের অভ্যান্তরীণ বাজার আরও শক্তিশালী হবে। নিম্নবিত্তদেরকে মধ্যবিত্তের কাতারে নিয়ে আসার জন্য অর্থনীতিতে যে অসমাতা রয়েছে সেটা দূর করতে হবে।
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ অন্য যেকোনো দেশের চাইতে র্যাংকিয়ে দ্রুত উঠবে বলে গবেষণায় দেখানো হয়। বর্তমানে বৈশ্বিক মধ্যবিত্ত শ্রেণি সূচকে ২৮তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ২০৩০ সালে ১১তম অবস্থানে পৌঁছবে। সেইসঙ্গে আরও ৫ কোটির বেশি মানুষ আগামী দশকে মধ্যবিত্ত ভোক্তার খাতায় নাম লেখাবে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশে নতুন মধ্যবিত্তের সংখ্যা হবে ৫ কোটি ২৪ লাখ।
ইতিমধ্যেই বিশ্বের মধ্যবিত্ত শ্রেণির অর্ধেকেরও বেশি বাস করে এশিয়ার দেশগুলোতে। কিন্তু ব্যয়ের দিক দিয়ে ভোক্তা ব্যয়ের মাত্র ৪১ শতাংশ তাদের অবদান। ২০৩২ সাল নাগাদ এটি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাব অনুসারে, চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র মধ্যবিত্ত শ্রেণিসংখ্যা হারে শীর্ষ তিন স্থান ধরে রাখতে পারে। কিন্তু উন্নত অর্থনীতিতে ধীরাবস্থা এবং নেতিবাচক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জাপান, জার্মানি, ইতালি এবং পোল্যান্ডের মতো দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংকুচিত হবে।