স্বরূপে ফিরেছে কুয়াকাটার সৈকত, বাড়ছে পর্যটক
উত্তম হাওলাদার : সাগরের ঢেউ এসে আছরে পড়ছে। আর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা আগত পর্যটকরা নেচে গেয়ে হৈ হুল্লোড়ে মেতে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতে যেন স্বরূপে ফিরেছে।
লেম্বুর চর, ঝাউবন, গঙ্গামতির লেক, কাউয়ার চর, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, কুয়াকাটার কুয়া, রাখাইনদের তাঁত পল্লীসহ পর্যটন স্পটগুলোতে হাজারো পর্যটকদের পদভারে এখন মুখরিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাখির কলতানে মুখরিত সবুজ প্রকৃতি সঙ্গে বালুকাবেলায় লাল কাকড়ার ঝাঁক। তাদের অবাধ বিচরণে সৈকতে ফুটে উঠেছে আল্পনা।
ঝিনুকের সারি ও প্রকৃতির নিজস্ব খেয়ালে সৃস্টি বিভিন্ন গুল্মলতা নতুন রূপ দিয়েছে সাগর কন্যা কুয়াকাটাকে। সাগরের বিশালতার পাশাপাশি এই অপরূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত করবে ভ্রমন পিপাসু প্রকৃতিপ্রেমীদের।
কেউ ঘোড়ায় চড়ছে, কেউ সৈকতে সাগরের ঢেউয়ে সাথে গোসল করছে। কেউ কেউ প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ বা আবার গা ঘেষিয়ে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এমন দৃশ্য আবার নিজ নিজ হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়ে সেলফি তুলে ধারন করেছে অনেকে। এর ফলে পর্যটকের এমন ভীড়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ফিরে পেয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্য। এদিকে এসব পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যনট স্পটগুলেতে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ি ও স্থানীয়রা জানান, প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা। এ প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে দেশি বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট বড় পর্যটন স্পট। কিন্তু ঊর্ধ্বগামী পর্যটন শিল্পের বিকাশে থাবা বসিয়েছে মহামারী করোনা ভাইরাস। এতে বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত উঠেছে। সেইসঙ্গে পর্যটনমুখী সংশ্লিষ্টদের জীবন জীবিকা পড়ে হুমকির মুখে। এদিকে হোটেল-মোটেল রিসোর্টসহ সকল বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা ফিরে এসেছে স্বস্তির নি:শ্বাস। এখন তারা আবার নতুন করে দেখছে আশার আলো।
যশোর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি নুরু আলম ও জিনিয়া আক্তার সাথী বলেন, করোনা পরিস্থিতির করনে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি ছিলাম। শনিবার সকালে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি। আরো দু’দিন থাকবো এখানে। এখানকার নির্মল বাতাস, সাগরের ছোট ছোট ঢেউ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য যেন যে কেউকে বিমোহিত করবে।
ট্যুরিস্ট ব্যবসায়ী হোসাইন আমির বলেন, ভাবতেও পারেনি দেশের এরকম পরিস্থিতিতে এত পর্যটকের আগমন ঘটবে। এসব পর্যটকদের সমুদ্র ঘুড়ে দেখার জন্য এখানে বেশ কয়েটি ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। তাই বোট মালিকরা ডিসকাউন্ট দিয়ে খুব কম খরচে ফাতরার বন ও চর বিজয় নিয়ে যাচ্ছে। আর পর্যটকরা অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করছেন।
হোটেল সমুদ্র বাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, তার হোটেলে ১৭টি রুম রয়েছে। পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাশনের নির্দেশনা অনুযায়ী রুম বুকিং দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারী মো.মোতালেব শরীফ বলেন, স্বাস্থবিধি মেনেই সকল হোটেল মোটেলে পর্যটক রাখার ব্যবস্থা গ্রহন হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। আশা করছি শীতের মৌসুমে পর্যটকের বেড়ে যাবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারি পুলিশ সুপার মো.আব্দুল খালেক বলেন, শুক্র-শনিবারের চেয়ে আজ পর্যটকের সংখ্যা একটু কম। তবে আগত পর্যটদের সংঘবন্ধভাবে না চলা ও বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের জন্য বার বার মাইকিং করে বলা হচ্ছে। এছাড়া পর্যটন স্পটগুলেতে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।