ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ হাজার ২০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে টানা আট কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও ব্যাপক সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক”েঞ্জ ডিএসইর আরও উচ্চতায় উঠে এসেছে। এদিন একদিনে চার রেকর্ড হয়েছে। এই নিয়ে টানা ৮ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচক উর্ধ্বমুখী অব্যাহত রয়েছে। আর টানা ৭ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে রেকর্ড গড়ছে আর ভাঙছে। টানা উত্থানের কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ হাজার ২০০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। সবকটি মূল্য সূচক রেকর্ড অবস্থানে উঠে আসার পাশাপাশি বাজার মূলধনও ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকায়। এর আগে কখনো ডিএসইর বাজার মূলধন পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারেনি।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত- উল- ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গতি ফিরে এসছে শেয়ারবাজারে। গড়তে থাকে একের পর এক নতুন নতুন রেকর্ড। সংশ্লিষ্টরা আরও মনে করেন, দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে চাঙ্গা প্রবণতায় এখন দেশের শেয়ারবাজার। প্রতি সপ্তাহেই রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে। পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহেই ফিরছে বিনিয়োগকারীদের খোয়া যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা। এদিকে চাঙ্গা বাজারে মিউচ্যুায়াল ফান্ডের ইউনিটির দাম তুলনা মুলক না বাড়ায় হতাশায় রয়েছেন যারা মিউচ্যুায়ল ফান্ডের বিনিয়োগ করেছেন। এবিষয়ে বিনিয়োগকারী এহতেশামুজ্জামান বলেন, চাঙ্গা বাজারে স্বল্প মুলধন কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দিবে আশা করি।
পাশাপাশি তিনি বলেন, অধিকাংশ ব্যাংক মুনাফা করেছে তারপরও ব্যাংকের শেয়ারের দর তুলনা মূলক ভাবে বাড়ছে না বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই হতাশাজনক। গত একবছরে আমরা সাধারন বিনিয়োগকারীরা দেখলাম ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশ অনেক আকর্ষণীয় এবং ব্যাংকের শেয়ার প্রতি ইপিএস অনেক ভাল, তার পর ব্যাংকের শেয়ারের দর সেই হারে বাড়ছে না। এহতেশামুজ্জামান আরও বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ মন্দ অর্থাৎ দুর্বল মৌলভিত্তিক কোম্পানির শেয়ারের দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে নজর রাখা।
দুর্বল কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের কখনো ভালো লভ্যাংশ দেয় না। আরেক বিনিয়োগকারী বাচ্চু বলেন, অনেক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট আন্ডার ভ্যালুড নিচে রয়েছে, ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। তার পরও দাম সেই ভাবে বাড়ছে না। এখান থেকে অনেক বাড়ার সুযোগ আছে। আশা করি সামনে মিউচ্যুায়াল ফান্ডের ইউটিরি দর বাড়বে। গতকাল লেনদেনের সময় ১০ মিনিট পার হতেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হতে থাকে। ফলে লেনদেনের ২৬ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ২৮ পয়েন্ট পড়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। দাম বাড়তে থাকে মৌলভিত্তি সম্পন্ন বড় মূলধনের কোম্পানির শেয়ার দাম। ফলে বড় পতন থেকে বেরিয়ে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরে শেয়ারবাজার। লেনদেনের শেষদিকে বড় মূলধনের কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার পালে যেন আরও হাওয়া লাগে। ফলে সমান সংখ্যক প্রতিষ্ঠানর দরপতনের পরও মূল্য সূচকের বড় উত্থান দিয়ে লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৭টির। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এরপরও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬২ পয়েন্ট বেড়ে ৭ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। মূল্য সূচকের ভুল গণনা বন্ধ করতে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি নতুন সূচক ডিএসইএক্স চালু করে ডিএসই। ৪০৫৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট দিয়ে শুরু হওয়া সূচকটি এই প্রথম ৭ হাজার ২০০ পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করলো।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৬৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৯২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ দু’টি সূচকও এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৯৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২ হাজার ৫৫৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৪১ কোটি ৬ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮১ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার ৭১ কোটি ৫২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, বিবিএস কেবলস, সাইফ পাওয়ার টেক, ন্যাশনাল টিউবস এবং অলেম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৫২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৭টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।