ভূঁইয়া আশিক রহমান : রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবির বলেছেন, কৃষকদের সুরক্ষা দিতে গিয়ে হয়তো চালের দাম কমানো যাচ্ছে না বা কমছে না। কৃষকদের পণ্যের দাম নিশ্চিত করাও তো সরকারের দায়িত্ব। শুধু শহরের মানুষদের অভিযোগের ভিত্তিতে চালের দাম কমানোর যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু মধ্যসত্বভোগীদের কারণে কৃষকেরা পণ্যের কম দাম পান। বিভিন্ন সময় বাজারে কারসাজি করে দাম বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে চাতাল মালিকেরা পণ্য মজুত করে। মজুতদারদেরও বাইরে নিয়ন্ত্রণের লোক আছে! তারাই মূলত চালের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, কোনো কোনো সময় সিজনালি খাদ্যের মজুত কমে। এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। চালের বাজার স্থিতিশীল করতে প্রয়োজন সরকারি চালের মজুত কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে চিন্তা করা। আগের চেয়ে বেশি চাল মজুত করতে হবে সরকারি গুদামে। আমাদের মজুতভান্ডার বেশি নয়। সরকারি গুদাম বেশি বেশি তৈরি করতে হবে।
ড. আহমদ আল কবির বলেন, ফসলের বাম্পার ফলনের পর কেন সরকারকে এতো আমদানি করতে হয়? কারণ সরকারের মধ্যে পরবর্তী ফসল ঠিকঠাকমতো আসবে কিনা তা নিয়ে ভয় কাজ করে। বোরো ফসল ওঠার সময় দেশে সবচেয়ে অনিশ্চতা তৈরি হয়। আউস ধান ওঠার আগেও একটা অনিশ্চয়তা থাকে। বন্যা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক সংকট দেখা দেয় কিনাÑ এরকম একটা সংশয়ও থাকে। সরকার নিশ্চিত হতে চায়- যেকোনো সংকট যেন বড় না হয়। সহজে মোকাবেলা করা যায়।
রূপালী ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে ৭০-৭৫ শতাংশ মানুষ গ্রামে থাকেন। চালের দামের ব্যাপারে শহরের মানুষই কথা বলছেন। দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন। চালের দাম নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে চালের দাম বৃদ্ধিতে শহরের গরিব শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কষ্ট হয়।
গরিব, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের জন্য সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। চাল-ডাল বিক্রিই সরকারের প্রিভেন্টিভ মেজার। রেশনিং পদ্ধতি থেকেও একদিন আমাদের বের হতে হবে। তবে হুট করে তা করা যাবে না। গরিব মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। রেশন নেওয়া মানুষের সংখ্যা আগে বেশি ছিলো, এখন অনেক কম। কারণ গরিব মানুষের খাদ্যের যোগানে বড় সোর্স ছিলো রেশন।
তিনি বলেন, দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই। কারণ পর্যাপ্ত খাদ্য আছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বলয় ব্যবস্থা চালু আছে। গরিব মানুষেরা বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতাসহ অনেকগুলো ভাতার আওতায় আছেন। প্রয়োজনে বড় বড় শহরগুলোতে ট্রাকে ট্রাকে চাল-ডাল বিক্রি করা হয় স্বল্পমূল্যে।
খাদ্যভান্ডার শক্তিশালী করতে হবে। সরকারি গুদামে মজুতের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, এক বছরের মজুত যদি আরেক বছরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়, তাহলে ইমার্জেন্সি আমদানি করতে হবে না।