ভালো লভ্যাংশ দেওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অধিকাংশ ইউনিটির দাম ফেসভেলুর নিচে চাঙ্গা বাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার আরো উচ্চতায় উঠেছে। প্রত্যেকদিনই হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। গত সপ্তাহ ৫ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। ৫ কার্যদিবসই শেয়ারবাজারে রেকর্ড হয়েছে। প্রত্যেকদিনই রেকর্ড গড়ছে ভাঙছে। দেশের শেয়ারবাজার গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। চাঙ্গা শেয়ারবাজারে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়লেও ভালো লভ্যাংশ দেওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অধিকাংশ ইউনিটির দাম ফেসভেলুর নিচে থাকায় হতাশায় রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭ ইউনিটের মধ্যে ২৩টি ফেসভেলুর নিচে রয়েছে।
এদিকে চার বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয় না মিথুন নিটিং। সবশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটি রয়েছে বড় ধরনের লোকসানে। অথচ এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম গত চার মাসে বেড়েছে ২০০ শতাংশের বেশি।
দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনে না থাকা এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়া আরেক প্রতিষ্ঠান সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল। চার বছর ধরে কোম্পানি কোনো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে না। অথচ এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম গত চার মাসে বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ।
শুধু মিথুন নিটিং বা সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল নয়, সম্প্রতি অনেক দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ফু-ওয়াং সিরামিক, সেলভো কেমিক্যাল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জিবিবি পাওয়ার, এমারেল্ড অয়েল, ন্যাশনাল ফিড মিল, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ঢাকা ডাইং, ফরচুন সুজসহ আরও বেশকিছু কোম্পানি।
এসব দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়লেও ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার পরও অনেক প্রতিষ্ঠানের দাম তলানিতে। এমনকি ১২ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের দাম পড়ে রয়েছে ১০ টাকার নিচে। এর মধ্যে সবচেয়ে তলানিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম।
বিনিয়োগকারীদের ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া গ্রীণ ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৩০ পয়সায়। ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া আর এক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ডিবিএইচ ফার্স্ট’র দাম দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৫০ পয়সা।
একইভাবে ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া ফার্স্ট জনতা মিউচ্যুয়ার ফান্ডের দাম পড়ে রয়েছে ৯ টাকা ৪০ পয়সায়। ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া আরেক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইবিএল ফার্স্টের দাম পড়ে আছে ৯ টাকা ৯০ পয়সায়। ৯ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়ার ফান্ডের দাম ৭ টাকা ৬০ পয়সা।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, একদিকে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়া, অন্যদিকে ভালো লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের দাম তলানিতে পড়ে থাকাকে অস্বাভাবিক বলছেন তাদের অভিমত, সম্প্রতি কিছু দুর্বল শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়লেও সার্বিক শেয়ারবাজার এখন বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। তাই বিনিয়োগকারীদের অধিক মুনাফার লোভ পরিত্যাগ করে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত। এক্ষেত্রে ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম কমে গেলেও চিন্তার কিছু নেই। কারণ বছর শেষে ভালো কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশ পাওয়া যাবে।
এবিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম না বাড়া এবং দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়া মোটেই শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক আচরণ না। বিনিয়োগকারীরা কীসের ভরসায় এখানে (দুর্বল প্রতিষ্ঠান) বিনিয়োগ করেন বুঝি না। দুদিন আগে হোক অথবা পরে- তারা তো মার খাবে। দুদিন পর যখন অন্য বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারবে এটা টেকসই না তখন তারা বিক্রি শুরু করবে এবং দাম পড়ে যাবে। তখন তাদের মূলধন লস হবে।
আমার কাছে মনে হয় সার্বিকভাবে বাজারের পরিস্থিতি খুব একটা উদ্বেগজনক না। কারণ বাজার যে ওঠা-নামার মধ্যে আছে তা অতিরঞ্জিত না।
তিনি আরও বলেন, কেন এগুলো হচ্ছে তা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের দেখা উচিত। একই সঙ্গে এক্ষেত্রে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা নিতে হবে। যেমন মার্জিন ঋণ কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জাগো বলেন, যেসব বন্ধ ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দাম সম্প্রতি বেড়েছে আমরা সেগুলোকে নজরদারিতে রেখেছি। কোনো ধরনের কারসাজি থাকলে আমরা তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। তবে কেউ যদি কোনো শেয়ার কেনেন আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারি না ।
এবিষয়ে বিনিয়োগকারী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, চাঙ্গা বাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটির দাম না বাড়ায় হতাশাজনক। ৩৭টির মধ্যে এখনো ২৩টি ইউনিটির দর ফেসভেলুর নিচে রয়েছে। গত একবছরে আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দেখলাম মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ঘোষিত লভ্যাংশ অনেক আকর্ষণীয় তার পরও দাম বাড়ছে না। এটা বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশার। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও