স্কুল-কলেজের সামনে অভিভাবকদের আড্ডা নিয়ন্ত্রণ করা হবে দেড় বছর পর বাজলো স্কুলের ঘণ্টা
শাহীন খন্দকার : করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ির মধ্যে দিয়েই খুললো স্কুলের গেট। উদগ্রীব শিশু-কিশোররাও হাজির ক্লাসের অনেক আগেই। তবে, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের করোনা ঝুঁকি রোধ করে স্কুল চালানোর প্রাণান্ত চেষ্টা মাঝে মধ্যেই প- করেছেন স্বাস্থ্যবিধি না মানা অভিভাবকরা।
ধানমন্ডি কলাবাগান ভিকারুননিসা নূন স্কুল শাখায় ৯ মাস আগেই প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল আধিরা আরিফ। কিন্তু স্কুল-ক্লাসরুম দেখতে কেমন, এতোদিন তা চোখেই দেখেনি ক্ষুদে এই শিক্ষার্থী। করোনাকালে অনলাইন থেকে বেরিয়ে মুখোমুখি ক্লাস করতে পারার আনন্দে উদ্বেল, ঢাকা নগরীর এমন অনেক হাজারো শিশুই।
স্কুলে অবশ্য রীতিমত স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি। গেট দিয়ে ঢুকলেই আগে হাতে স্যানিটাইজার মাখতে হচ্ছে। মাপা হচ্ছে তাপমাত্রা ও। ৬ফিট দূরত্ব মেপে সারিবেঁধে ঢুকতে হচ্ছে ক্লাসে। স্কুলের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে মোছা হচ্ছে কিছুক্ষণ পরপরই। আছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও। তবে স্কুলের উপর ভরসা করেই বসে থাকেননি অভিভাবকরা। তারাও নিজেদের বাচ্চাদের সঙ্গে দিয়ে দিয়েছেন বাড়তি মাস্ক আর স্যানিটাইজার। তবে সবচেয়ে বেশি যাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা ছিলো, সেই অভিভাবকরাই মানেন নাই নিয়ম। স্বাস্থ্যবিধি ভুলে স্কুলগেটে ভিড় করে বাড়াচ্ছেন নিজের এবং সন্তানদের করোনা ঝুঁকি। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস ও হলিক্রস স্কুলে অবশ্য এসব ঝামেলা এড়াতে অভিভাবক ঢোকাই বন্ধ। সবকটি স্কুলেই পোশাকের নিয়ম ছিলো শিথিল।
তবে আবেগের উচ্ছ্বাসে যাতে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে ধরে কিংবা সামাজিক দূরত্ব ভুলে না যায় সেটি নিশ্চিতে ছিলো কড়া নজরদারি।
এদিকে তিতুমির কলেজে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র ,কলেজটির শিক্ষার্থীদের ফ্রিস্টাইলে মাঠে ঘুরতে দেখা যায়। অনেককে দেখা যায় কলেজ গেটে দলবেধে ফোসকার দোকানে ফোসকা খেতে। মাস্ককের কোন বালাই নেই। মেয়েদের দেখা যায় হাতে হাত রেখে মাঠে পায়চারি করতে।
অন্যদিকে দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে উৎসবের আমেজ ছিলো রাজধানীর ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতেও। উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা ক্লাস শুরুর আগেই, হাজির হয়েছে স্কুলে। কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। যদিও অভিভাবকদের শঙ্কা, হয়তো স্কুল থেকে করোনা আক্রান্ত হতে পারে প্রিয় সন্তানটি। কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা, স্কুলে ফিরতে পেরে কবিগুরুর এই গানের মতোই হারিয়ে যেতে চেয়েছে শিক্ষার্থীরা। যারা দীর্ঘ ৫৪৩ দিন ঘরে বন্দি। আবার, কোথাও আলোকের এই ঝর্ণাধার ধুইয়ে দাও। রাজধানীর ধানমন্ডির নালন্দা বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু সকাল ৯টায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হাজির সকাল সাড়ে সাতটার পর থেকেই। একই চিত্র দেখা যায় ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ক্লাস শুরু সকাল আটটায়। কিন্তু সাতটা থেকেই হাজির শিক্ষার্থীরা। সরকারি নির্দেশনা মতো, দেয়া হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
তবে স্কুলের সামনে অভিভাবকরা জটলা করেছেন। এ নিয়ে রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম আরো বলেছেন, স্কুল-কলেজের সামনে অভিভাবকদের জটলা সন্তানের বিপদের কারণ হতে পারে। অভিভাবকদের এমন আড্ডার কারণে করোনার নি¤œগতিকে প্রভাবিত করতেও পারে।
তিনি বলেন, অভিভাবকরা যদি স্বাস্থ্যবিধির অবজ্ঞা করেন কিংবা সঠিকভাবে না মানেন তাহলে শুধু নিজেদেরই নয়, সন্তানদের জন্যও বিপদের কারণ হতে পারেন। রোববার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে। করোনা শনাক্তের হার ৭ শতাংশে নেমেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সবাইকে সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া করোনার কারণে গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০টি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
যেমন- (১) চেকলিস্টের মাধ্যমে দৈনিক তদারকি করা হবে প্রতিষ্ঠান। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে ঢাকায়। (২) শিক্ষার্থীদের দৈনিক সচেতন করা হবে। বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার । (৩) হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। (৪) দৈনিক প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই- এ জন্য গেইটে ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ। (৫) প্রয়োজনে আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা। (৬) লক্ষণ থাকলে শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত হিসেবে বিবেচনা না করা। (৭) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শ্রেণিকক্ষে বসানো। (৮) স্কুলে কোনো সমাবেশ না করা, তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে যার যার আসনে রেখে হালকা শারীরিক কসরত। (৯ ) পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা। (১০) হোস্টেলে বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণ।