আমিরুল ইসলাম : ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত এক যুগেরও বেশি সময়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বহুগুন বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণের ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি নেই। সঞ্চালন ও বিতরণের অগ্রগতির জন্য কী করা প্রয়োজন এবং চ্যালেঞ্জগুলো কী জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় এখনো লোডশেডিং রয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন এতো বেশি যে বেশকিছু প্রাইভেট কোম্পানিকে বসিয়ে বসিয়ে বছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ বিভিন্ন এলাকায় এখনো লোডশেডিং হয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সঞ্চালন ও বিতরণের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। সঞ্চালন ও বিতরণের যে লাইন আছে, তাতে যতোটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, সেটা সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট সক্ষম না বা সেভাবে আপডেটেড নয়।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ নিয়ে যা কিছু পরিকল্পনা সেগুলোর মধ্যে ভারসাম্য ও সমন্বয় নেই। সেগুলোর মধ্যে কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। এ বিষয়গুলো থাকলে যেটা হতোÑ প্রত্যেকটা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করার আগে তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিতরণ ও সঞ্চালনের ব্যাপারেও চিন্তা করা হতো এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হতো। এগুলো করা হয়নি বলে পায়রা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, অথচ সেগুলো অব্যবহৃত থাকছে। এজন্য প্রতি মাসে একশ কোটি টাকা করে জরিমানা দিতে হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সমস্যা হচ্ছেÑ সবসময় বিদেশি কোম্পানি, বিদেশি তহবিল, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ও বিশ^ব্যাংক ফান্ড দিলো কিনা, কিংবা বিদেশি কোনো কোম্পানি আগ্রহী কিনা, বাংলাদশের বড় কোনো কোম্পানি কোনো কাজে আগ্রহী কিনাÑ এসবের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। লবিস্টরা যেখানে শক্তিশালী সেখানে কাজ হয়, যেখানে লবিস্ট সেখানে কাজ হয় না। সরকারের নিজস্ব ভারসাম্যপূর্ণ পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যে উৎপাদন কম খরচে হতে পারতো, সেটা হচ্ছে না। যে বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন হতে পারতো, সেটা হচ্ছে না। সবসময়ই একটা দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বারবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে কতো মানুষের কতো ধরনের জিনিসপত্র যে নষ্ট হচ্ছে তার কোনো হিসেব নেই। এটার ক্ষতিপূরণও সরকার দেবে না। বিদ্যুৎ খাতের এই অবস্থার কারণে কিছু গোষ্ঠী বসে বসে টাকা পাচ্ছে আবার দেশের নাগরিকদের বেশি দামে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। ঘোষিত ও অঘোষিতভাবে বিদ্যুতের অনেক বেশি দাম মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে।