জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
অর্থনীতি ডেস্ক : সাতশ’ ৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু নিজের হাতেই বিদ্যুতের সুইচ অফ করি। যখন যেখানে মনে হয় বিদ্যুৎটা অপ্রয়োজনীয়, আমি নিজের হাতে সুইচগুলো অফ করি। গণভবনে যারা কাজ করেন, তাদের নিয়ম হচ্ছে সব জ্বালিয়ে রাখা। কিন্তু আমি আমার সাশ্রয়টা সঠিকভাবে করে রাখি, অভ্যাসটা ঠিক রাখি। সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার প্রধান বলেন, বিদ্যুৎ যারা ব্যবহার করেন, তাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। এখন তো অনেক অর্থশালী, সম্পদশালী লোক হয়ে গেছে। আপনারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, বিল দেবেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যে বিদ্যুৎটা উৎপাদন করছি তার খরচ কিন্তু অনেক বেশি।
দেশের মানুষকে নাগরিক সেবা দিতেই বিদ্যুতে ‘ব্যাপক হারে ভর্তুকি’ দেয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, উৎপাদনের খরচটা কিন্তু আপনাকে বিল হিসেবে দিতে হচ্ছে না। অনেক কম টাকা বিল নেয়া হয়। সেই ক্ষেত্রে সকলকে অনুরোধ করব, বিদ্যুৎ ব্যবহারে আপনারা একটু সচেতন হবেন।
মানুষের ক্রয় সক্ষমতা আরও বাড়ুক- এটাই সরকারের চাওয়া জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈষম্য যেন থাকে না, মানুষ যেন সব ধরনের সুবিধা পায়। কিন্তু ব্যবহারের সময় যদি আপনারা সাশ্রয়ী না হন, তাহলে কত ভর্তুকি আমরা দিতে পারব? সেটা দেখতে হবে। সেজন্য সবাইকে আমরা অনুরোধ করব, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে।
নিজ ঘরের সুইচটা নিজের হাতে অফ করাটা লজ্জার কোনো বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন তিনি। অভ্যাস ধরে রাখার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন. চিরদিন তো আর কেউ প্রাইম মিনিস্টার থাকেন না। পাঁচ বছরের জন্য আসি, এরপর তো আর থাকব না। যখন থাকব না, তখন তো নিজের মতোই চলতে হবে। অভ্যাসটা নষ্ট করে লাভ নেই।
উদ্বোধন করা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা-৩ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়া যাবে ৪০০ মেগাওয়াট, বাগেরহাটের মধুমতি কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট, সিলেটের কুমারগাঁও কেন্দ্রের আপগ্রেডেশনের কারণে আসবে ৭৫ মেগাওয়াট, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০৪ মেগাওয়াট ও চট্টগ্রামের জুলদা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি মিলিয়ে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। এ তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, তার চেয়ে এখন আমরা বেশি উৎপাদন করছি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র পাঁচটি হচ্ছে- হবিগঞ্জের জুলদায় বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট-২, নারায়ণগঞ্জে মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট, বাগেরহাটে মধুমতী ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিলেটের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উত্তরণ।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০০৯ সালে কাজ শুরুর পর সরকার সফলভাবেই ২০ হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম ১১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছিল। তবে এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলো থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসেকা আয়েশা খান, জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান, বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান এবং গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকার সরকার সফলতার সঙ্গে ১১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে যার উৎপাদনক্ষমতা ২০ হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। কিন্তু এর মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে- যা ২০০৯ সালে ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। সূত্র : নিউজ বাংলা, সারা বাংলা, বাংলাট্রিবিউন। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও