কমনওয়েল্থ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে শক্তিশালী পথ খুঁজে বের করতে হবে
সোহেল রহমান : অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, পুরো বিশ্ব সম্প্রদায় এখন একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কভিড-১৯-এর প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনীতি আজ হুমকীর সম্মুখীন। কমনওয়েল্থভুক্ত দেশগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। কোভিড-১৯ মহামারীজনিত কারণে গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যেখানে কমনওয়েল্থভুক্ত অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এমতাবস্থায় কমনওয়েল্থভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে একটি শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজে বের করতে হবে।
কমনওয়েল্থভুক্ত দেশগুলোর চলমান কমনওয়েল্থ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২১-এ সোমবার এক প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- কমনওয়েলথ বাণিজ্য : দ্য লিভার ফর ফিউচার প্রসপারিট। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে আঙ্কটাড’র একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মতে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ৪২ শতাংশ কমেছে। আর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কমনওয়েলথ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি।
কমনওয়েল্থভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব অর্থনীতিতে কমনওয়েল্থ দেশগুলোর ভূমিকা মাত্র ১৩ শতাংশ; বৈশ্বিক এফডিআই’র মাত্র ২০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১৪ শতাংশ। আন্ত: বাণিজ্যে কমনওয়েল্থভুক্ত ৫৪টি দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ১৮ শতাংশ। সমস্ত কমনওয়েলথ দেশগুলোতে যুক্তরাজ্যের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ৯.১ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, বাণিজ্য সম্পর্কিত কমনওয়েলথের বিদ্যমান নীতি এবং কৌশলগুলি কমনওয়েলথ দেশগুলোর জন্য সন্তোষজনক নয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কমনওয়েল্থের একটি গৌরবময় অতীত আছে। ১৭৬৯ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বাষ্প ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্প বিপ্লবের যাত্রা, যা সত্যিই বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের শিখা জ্বালিয়েছিল। ১৭৭১ সালে সত্যিকারের কারখানা বলতে যা বোঝায়, সেটি প্রথম যুক্তরাজ্যের ডার্বিশায়ারের ক্রমফোর্ড গ্রামে নির্মিত হয়েছিল। সর্বজনবিদিত একটি একটি সত্য হচ্ছে- সপ্তদশ শতাব্দীতে ভারত উপমহাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্তঃকমনওয়েল্থ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের উপায় এবং পথ খুঁজে বের করার পাশাপাশি আমরা কমনওয়েল্থের গৌরবময় অতীত ফিরে পেতে পারি। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে কমনওয়েল্থের ২০তম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সম্পদের ব্যাপক ব্যবহার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির জনশক্তির জন্য একটি নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিড মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাবের তীব্রতা অনুধাবন করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জিডিপি’র ৬.২৩ শতাংশের সমান ২২.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। ইতিমধ্যে এর সুফল ভোগ করে চলেছে বাংলাদেশ।
২০২০ সালের আইএমএফ’র অক্টোবরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্ব অর্থনীতিতে গড়ে ৪.৪ শতাংশের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যায়, সেসময়ে অতি অল্প কয়েকটি ইতিবাচক অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, মহামারী প্রতিকূলতার বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচটি সহনশীল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল’র চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী ও বাণিজ্য বোর্ডের সভাপতি এলিজাবেথ ট্রাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।