নদীর খননকাজ গতিশীল করতে আরও ৩৫ ড্রেজার আনা হবে : বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান
সুজিৎ নন্দী : বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনও একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। বরং আরো বেশি গতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিকল্পনা মাফিকই সবকিছু এগোচ্ছে। গত অর্থবছর আমরা ৩শ কিলোমিটার নৌপথ উদ্ধার করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব ড্রেজারের পাশাপাশি বেসরকারি ড্রেজারের মাধ্যমেও বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিত খননকাজ চলছে। আগামীতে খননকাজ যাতে আরো বেশি গতিশীল হয়, সেজন্য বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে ড্রেজারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। আরো ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে ড্রেজারের সংখ্যা আমরা ৮০টিতে উন্নীত করতে চাই। এটি এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।
তিনি আরো বলেন, নৌ-শ্রমিকের জীবন যাতে কোনোমতেই ঝুঁকিতে না পড়ে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নৌযান মালিক ও স্থানীয় প্রশাসন এর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। পরিপূরক ব্যবস্থা হিসাবে ট্রাকলরি সচল রেখে প্রান্তিক যোগাযোগ চালু রাখার ক্ষেত্রেও সমন্বয় করতে হয়েছে। নৌ-পরিবহনের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সংস্থাও এ ব্যাপারে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে।
কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা বিশে^র মতো আমাদেরকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সাধারণ ছুটির মধ্যেও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে নৌপথকে সচল রাখতে হয়েছে। তবে নৌপথ সচল রাখতে গিয়ে যাতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত না হয়, সেদিকটাতেও বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষও অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সার্বক্ষণিক এ ব্যাপারে কাজ করেছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে উদ্ভাবনীমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসবের ফলে নৌপরিবহন খাতে করোনা বিস্তার আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, সেই সঙ্গে বেসরকারি ড্রেজার তো আছেই। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের মধ্যেই ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের যে লক্ষ্য তা আমরা অর্জন করতে পারব বলে আশাবাদী। নৌপথ পুনরুদ্ধারে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার। মহাপরিকল্পনায় সরকারের এই মেয়াদেই ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। এজন্য ড্রেজিং করা হবে ১৭৮টি নদী।
চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০১৩ সালে ১৪টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু ড্রেজার বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে যুক্ত হয়। এই নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে ড্রেজার আছে বর্তমানে ৪৫টি, যা দিয়ে বছরে প্রায় ৩৪৬ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা সম্ভব।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র দ্বিগুণের বেশি ড্রেজার রয়েছে বেসরকারি মালিকানায়।
ব্যক্তিমালিকানায় এই মুহূর্তে ১শটির বেশি ড্রেজার রয়েছে, যা দিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে ৪শ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা যায়। যদিও বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং চাহিদা আরো অনেক বেশি, বছরে প্রায় ১ হাজার ৬শ লাখ ঘনমিটার। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ড্রেজিং করতে তাই ড্রেজারের বহর শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের আওতায় ১০টি ড্রেজার ২০২২ সালের মধ্যেই বিআইডব্লিউটিএ’র বহরে যুক্ত হওয়ার কথা। তখন সংস্থাটির নিজস্ব ড্রেজারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৫৫টিতে। আর প্রকল্পটির আওতায় সবগুলো ড্রেজার কেনা হলে বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব ড্রেজারের সংখ্যা ৮০-তে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে দ্বিগুণের বেশি হবে সংস্থাটির নিজস্ব ড্রেজিং সক্ষমতা। বহরে ৮০টি ড্রেজার নিয়ে বার্ষিক ৬৭২ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং সক্ষমতা তৈরি হবে। সরকারি-বেসরকারি মিলে তখন বার্ষিক ড্রেজিং চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে।
কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, নৌপথ নিরাপদ করতে দক্ষ চালক তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালেই দুটি ডেক ইঞ্জিনিয়ারিং পার্সোনেল ট্রেনিং সেন্টার (ডিইপিটিসি) প্রতিষ্ঠা করেছে। আনফিট নৌযান যাতে নৌপথে চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারেও কঠোরতা এসেছে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়া আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ হয়ে উঠলে লঞ্চগুলো যাতে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল ইত্যাদি নদীবেষ্টিত জেলার দুর্যোগপ্রবণ এলাকার ১০টি স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। এসবের ফলে নৌ-দুর্ঘটনা এখন আগের চেয়ে কমে এসেছে।