ইভ্যালিসহ ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির
সোহেল রহমান : আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি’র বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে ই-কমার্স বিষয়ক জাতীয় কমিটি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও ডিজিটাল ই-কমার্সের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, সর্বসম্মত পর্যালোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইভ্যালি ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর সময় নিতে চায় না। এ বিষয়ে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হবে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাব যে, এই কোম্পানিগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ভোক্তা অধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
তিনি আরও বলেন, ইভ্যালি’র বিষয়ে ইতোপূর্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৈঠকে ইভ্যালি ছাড়া আরও ৯ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা মিটিংয়ে ইভ্যালি এবং অন্যান্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা সবাই আইন লঙ্ঘন করছে। আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে বিষয়টি হস্তান্তর করব।
তিনি বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং এটি বিবেচনাধীন রয়েছে যাতে অপরাধীরা শাস্তি পায়। গ্রাহক ও বণিকরা যাতে তাদের পণ্য এবং বকেয়া পান, সে বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে। তবে আমরা বঞ্চিত গ্রাহকদের সুরক্ষা প্রদানের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণী যাচাই করার জন্য তৃতীয় পক্ষের অডিট ফার্ম নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, আইন আমাদের তা করার অনুমতি দেয় কি না- তা আমরা যাচাই করব। যদি আইন অনুমতি দেয়, তাহলে আমরা অবশ্যই ইভালির জন্য অডিটর নিয়োগ করব এবং অন্য ৯ জন অন-লাইন বণিক।
জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৯ ই-কমার্স কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণী যাচাই করার জন্য নিরীক্ষা সংস্থা নিয়োগের অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে ইভ্যালি ছাড়াও অন্য ৯ প্রতিষ্ঠান হলো ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদীনের প্রদীপ, কিউকম, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিউ ডটকম ডটবিডি ও আলেশা মার্ট।
ইভ্যালি ইস্যুতে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ইভ্যালির কাছে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের যে পরিমাণ অর্থ পাওনা রয়েছে, তা পরিশোধে যথেষ্ট নগদ টাকা নেই প্রতিষ্ঠানটির হাতে। চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালি তার যে আর্থিক স্টেটমেন্ট জমা দিয়েছে, তাতে এ চিত্র উঠে এসেছে। ইভ্যালি যে পরিমাণ সম্পদ থাকার কথা জানিয়েছে, তা গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনার তুলনায় অনেক কম। বড় প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ এনে সক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম দিয়ে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়। এর মধ্যে ইভ্যালিতে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েও তা থেকে সরে আসে যমুনা গ্রুপ।
অন্যদিকে আলোচ্য ৯ ই-কমার্স কোম্পানির হিসাব খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষক নিয়োগ দিতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের পরিচালক অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান জানান, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, কিউকম, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি ও আলেশা মার্টের আর্থিক লেনদেন বিষয়ে জানতে গত মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্যবসার বিস্তারিত তথ্য জানতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রসঙ্গটি এসেছে। সেই আলোকে তারা আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা ই-কমার্সের জন্য ভালো কিছু করতে চাই। কেউ যাচ্ছে নিজেদের মনগড়া কিছু করতে না পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আলোচিত এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা বুঝতে হলে তৃতীয় কোন পক্ষকে দিয়ে অডিট করাতে হবে। এর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠির বিষয়ে কিছু জানায়নি।
বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে এসব কোম্পানি লাখ লাখ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে এখন।
অনেকে অর্ধেক দামে পণ্য কিনে পরে বেশি দামে বিক্রির আশায় এসব কোম্পানিতে লাখ লাখ টাকার অর্ডার করেছেন। কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, কোম্পানি তাদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। সম্প্রতি এসব ঘটনায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের টানতে মোটসাইকেলকে বেঁচে নেয়।
তারা নানা অফারসহ অর্ধেক দামে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাতিয়ে নেয় শত শত কোটি টাকা। টাকা পরিশোধ করার ৪৫ দিনের মধ্যে মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে কিউকুম।
কিউকমের গ্রাহকদেররা ফেইসবুকে নানা অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ওই কোম্পানির অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভও করেছেন।
এ বিষয়ে কিউকমের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরজে নিরবের সঙ্গে ১০ দিন আগে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, আমরা যেসব বাইক বিক্রির অফার দিয়েছিলাম সেগুলোর স্টক শেষ হয়ে গেছে। সেকারণে বিলম্ব হচ্ছে। একইভাবে গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগে প্রতারণা মামলা হওয়ার পর ই-অরেঞ্জের মালিকদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকের পাশাপাশি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, পণ্য পরিবহন প্রতিষ্ঠানের, নিজস্ব কর্মীসহ বিভিন্ন মানুষের বকেয়া দিতে না পারার নতুন নতুন অভিযোগ প্রতিদিনই আসছে। প্রায় ১১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ এনে ই-কমার্স কোম্পানি ধামাকার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।