টেনিস জগতে রাডুকানু হবেন প্রথম বিলিয়ন ডলার ওম্যান
রাশিদ রিয়াজ : ১৮ বছর বয়সে ব্রিটেনের এমা রাডুকানু ইউএস ওপেন ভিক্টরিতে পুরস্কার পেয়েছেন আড়াই মিলিয়ন ডলার। খেলার পুরস্কার থেকে যে অর্থপ্রাপ্তি তারচেয়ে অনেক বেশি অর্থ আয় করছেন বা করবেন রাডুকানু স্পন্সরশিপ ডিল থেকে। লন্ডন ভিত্তিক ইন্টার ট্যালেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাথন শালিট বলেন আগামী বছরের মধ্যে এমা রাডুকানু ১শ মিলিয়ন ডলার আয় করতে সমর্থ হবেন। যা পুরুষ খেলোয়াড়দের আয়কে ছাড়িয়ে যাবে।
শালিট বলেন, বিশে^র বড় বড় ব্রান্ডগুলো এখনো এমার দরজায় কড়া নাড়ছে। ফ্যাশন, জুয়েলারি, কসমেটিক্স, স্কিনকেয়ার ও হেয়ারকেয়ার কোম্পানিগুলো এমাকে তাদের পণ্যে মডেল হতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি। রাডুকানু কানাডার টিন লেইলা ফার্নান্দেজকে সরাসরি পরাস্ত করেন। এবং এ জয়ের মধ্যে দিয়ে রাডুকানু সবচেয়ে কনিষ্ট গ্রান্ড স্লাম বিজয়ী হিসেবে আবির্ভুত হয়েছেন।
২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে মারিয়া শারাপোভা উইম্বেলডন জেতেন। রাডুকানুর বিজয় ইতিমধ্যে বিশ^মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। দি নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দি গার্ডিয়ানের মত অভিজাত মিডিয়াতেও। চীনে রাডুকানুর জয়কে দেশটির সরকারি থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবো অনেক বিশাল খবর হিসেবেই দেখা হচ্ছে। রাডুকানুর মা চীনা এবং তার বাবা রোমানিয়ার নাগরিক।
কানাডায় তার জন্ম। ফলে চীনা ঐহিহ্যের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে রাডুকানুকে। দুই বছর বয়সে রাডুকানু ব্রিটেন চলে যান। এসব কারণেই গ্লোবাল ব্রান্ডগুলো মরিয়া হয়ে ছুটছে রাডুকানুর পিছনে। তার বর্তমান স্পন্সর নাইক ও উইলসন তাকে কানাড, চীনা, রোমানিয়, ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে দেখাতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাহলে তাদের পণ্য এসব দেশের ভোক্তাদের কাছে ঈর্ষণীয় হয়ে ওঠার বাহন হবে রাডুকানু। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং পার্টনার্সের সিইও অ্যালিসন স্টুয়ার্ট মনে করেন রাডুকানুকে ঘিরে রীতিমত ব্রান্ডকোম্পানিগুলোর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে।
অ্যালিসন দিব্যি করে বলেন রাডুকানু এখন কর্পোরেট বাজারের স্বপ্ন। তার জয়ের পর রাডুকানু ইউএস ওপেনের অফিসিয়াল ওয়েবো অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে ম্যান্ডারিনে ভক্তদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা দেন। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, কেমব্রিজের ডিউক এবং ডাচেস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন উদীয়মান টেনিস তারকাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এসব অভিনন্দন বার্তায় তারা বলেছেন রাডুকানু পৃথিবীর কল্পনাকে ধরে ফেলেছেন, শালিত এবং চালিয়ে যান। যারা টেনিসে কোন আগ্রহ পান না তারা সম্পূর্ণরূপে এখন রাডুকানুর প্রেমে পড়ছেন।
কর্পোরেট কর্তারা বিশ^াস করতে শুরু করেছেন যদি এমা পরের বছর উইম্বলডন জিতে এবং পরবর্তী পাঁচ থেকে দশ বছর ধরে চলমান চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, তাহলে সেই হবে বিশ্বের প্রথম বিলিয়ন ডলারের মহিলা ক্রীড়া তারকা।
এধরনের জয় ও প্রাচুর্য তাকে দীর্ঘস্থায়ী ক্যারিয়ারের খেলোয়াড়দের একটি অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যে স্থান দেবে যেখানে বাস্কেটবল কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডান, গলফার টাইগার উডস এবং সহকর্মী টেনিস খেলোয়াড় রজার ফেদেরার অন্তর্ভুক্ত। গত মাসে ফোর্বস রিপোর্ট করেছে, ফেদেরার ষষ্ঠ সক্রিয় ক্রীড়াবিদ হয়েছেন যিনি এই বছর ক্যারিয়ারের উপার্জন ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছেন। তিনি টেনিসে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড় হিসেবে, টুর্নামেন্ট জয় এবং স্পনসরশিপ ডিল থেকে ২০২১ সালে ৯০.৬ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন। জাপানের নাওমি ওসাকা ৬০.১ মিলিয়ন ডলারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, এরপর উইলিয়ামস ৪১.৮ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন।
ফোর্বসের মতে, ওসাকা সর্বকালের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত নারী ক্রীড়াবিদ। তাকে রাডুকানু ছাড়িয়ে যাবেন অনায়াসে। টেনিসের বড় অর্থ আয় আসে কোর্ট থেকেই। ফেদেরার, ওসাকা এবং উইলিয়ামস স্পনসরশিপ ডিল থেকে আয় উপভোগ করেন যার ভিত্তি ছিল তাদের টুর্নামেন্টের জয়ের ওপর। রাডুকানুর জন্যে তা আরো সহজ হবে যদি ইনজুরি বাগড়া না দেয়। সিএনএন বিজনেস বলছে, একক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের ফলে রাডুকানুর ১শ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয়ের পূর্বাভাস ‘দ্য মার্ক অফ’।
একজন টেনিস তারকাকে এই ধরণের অর্থ উপার্জনের জন্য কয়েক বছর ধরে উচ্চ স্তরের সাফল্য ধরে রাখতে হয়। এবং নারী খেলোয়াড়দের জন্য কাজটি প্রায়শই কঠিন হয় যাদের সাধারণত পুরুষ সমকক্ষের চেয়ে কম বেতন দেওয়া হয়। ম্যান্ডারিন ভাষায় যখন রাডুকানু কিছু বলেন তা চীনা ব্র্যান্ডগুলিকে আকৃষ্ট করে দারুণভাবে। বিদেশী বাজারে প্রবেশ করতে বা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যা চীনে তাদের দৃশ্যমানতা বাড়াতে চায় তাদের জন্যে রাডুকানু এখন বড় মডেল। তার স্পষ্ট প্রাণবন্ততা ঈর্ষণীয়। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দী অবশ্য ওসাকা।
রাডুকানু কেবল ওসাকার খেলার সাফল্যের সাথে মেলে না, বরং তার ব্র্যান্ডের মূল্যবোধের সংমিশ্রণ এবং কিছু প্রতিনিধিত্ব করার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিতে বেশকিছুটা এগিয়েও রয়েছেন।