ইভ্যালির সিইও রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা গ্রেপ্তার
সুজন কৈরী : আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মোহাম্মদপুরের ৫/৫এ স্যার সৈয়দ রোডের নিলয় টাওয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের মোহাম্মদপুর থেকে র্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়।
এর আগে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির একজন গ্রাহক। মামলার নম্বর-১৯। এ মামলাতেই রাসেল দম্পতিকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় অপরাধের কথা বলা হয়েছে। ফৌজদারি দ-বিধির ধারাগুলো হচ্ছে- ৪২০, ৫০৬ ও ৪০৬। দ-বিধির ৪২০ নম্বর ধারাটিতে প্রতারণা করে সম্পত্তি বা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ অপরাধে একজন ব্যক্তির সাত বছরের কারাদ-, অর্থদ- ও উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। ৪০৬ নম্বর ধারায় ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অপরাধে সর্বোচ্চ তিন বছর জেল, অর্থ জরিমানা ও উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। ৫০৬ নম্বর ধারায় ভিক্টিমকে ‘হত্যা বা আঘাত করার ভয়ভীতি’ দেখানোর অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর নির্ধারণ করা আছে।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, একজন ভুক্তভোগী বাদি হয়ে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল ও তার স্ত্রীর নামে প্রতারণা মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মামলাটি থানা পুলিশ গ্রহণ করে।
মামলার এজাহারে আরিফ বাকের উল্লেখ করেছেন, ইভ্যালির অনলাইন প্লাটফর্মে তিন লাখ ১০ হাজার ৫৯৭ টাকার পণ্য অর্ডার করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা পাননি তিনি। নিরুপায় হয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯ মে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিযোগকারী আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন।
পণ্যের অর্ডার বাবদ সব মূল্য বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পরিশোধ করেন তারা। পণ্যগুলো সাত থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারি ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু ঐ সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি না পাওয়ায় বহুবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করা হয়।
সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করে অর্ডার করা পণ্যগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আরিফরা।
একপর্যায়ে ইভ্যালি পণ্য প্রদান ও টাকা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে যান আরিফ ও তার বন্ধুরা। ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। একপর্যায়ে অফিসের অভ্যন্তরে থাকা ইভ্যালির রাসেল উত্তেজিত হয়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং পণ্য অথবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ভয়-ভীতি ও হুমকিসহ চরম দুর্ব্যবহার করেন। এতে আমরা আতঙ্কে দিনাতিপাত করছি। পণ্যগুলো বুঝে না পাওয়ায় আমি আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
এদিকে গত ২৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আরার আদালতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতারণা ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন একজন গ্রাহক। মামলায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নাম উল্লেখ করা হয়। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বাসিন্দা রাজ বাদি হয়ে মামলাটি করেন।
বৃহস্পতিবার মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছে। এরপরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি এবং তিনি কাজ করছেন। সেই সঙ্গে সদর দপ্তর থেকেও বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। গুরুত্বের সঙ্গে মামলার তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষ হলেই এ বিষয়ে বিস্তারিত গণমাধ্যমে জানানো হবে।
গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দেনার পরিমাণ ৪০৩ কোটি টাকা। আর প্রতিষ্ঠানটির চলতি সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। ৩৩৮ কোটি টাকাই কোম্পানির কাছে নেই।
এদিকে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের পর তার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা গ্রাহকরা। এ সময় ২০ থেকে ২৫ জন বিনিয়োগকারী বিক্ষোভ করতে করতে বলেন তাদের একেকজন প্রায় আট থেকে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটিতে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইভ্যালিতে বিনিয়োগের পর তাদের কয়েক মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পণ্য কিংবা টাকা কোনোটিই ফেরত দেওয়া হয়নি। অনেকে পরিবার থেকে টাকা নিয়ে আবার অনেকে জমি-জমা ও স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে এখানে বিনিয়োগ করেছিলেন। রাসেলের গ্রেপ্তারে টাকা ও পণ্য ফিরে পাওয়া অনিশ্চিয়তায় পড়ে গেছে বলে মনে করছেন তারা।
শাকিল আহমেদ নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, তিনি সাত লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। গত জানুযারিতে দামি দুটি বাইকের জন্য এই টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু ইভ্যালি তাদের দিনের পর দিন ঘুরিয়েছে।