অস্থির ডালের বাজার
মো. আখতারুজ্জামান : করোনার প্রভাবের কথা বলে আমদানিকৃত পণ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভর্তুকি দিয়ে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বিক্রি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাক সেলের মাধ্যমে সরকার পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের যে পদ্ধিতি রয়েছে এটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর না হলে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।
দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে আর এক দফা দাম বেড়েছে ডালের। প্রতিমণ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬০ টাকা থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা দামে, যা মাত্র একমাস আগে ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হতো। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন জাতের ডালের দাম ১৩০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কিনা তা দেখতে হবে। ব্যবসায়ীদের অভ্যাস বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লেই দেশের বাজারে তা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বিশ্বে দাম কমলে দেশে তা ধীরে ধীরে সমন্বয় করা হয়। ভোক্তার চেয়ে মুনাফার প্রতি তাদের বেশি নজর থাকে। সরকারকে বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বাজারে ডালের চাহিদা স্থির থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বুকিং বৃদ্ধি এবং ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডালসহ অন্যান্য আমদানিকৃত পণ্যেল দাম বাড়ছে।
এদিকে মণে প্রায় ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মুগডালের দাম। বর্তমানে, বাজারে ভালোমানের প্রতি মণ মুগডাল বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৪০০ টাকা দামে। দুই সপ্তাহ আগে একই মানের মুগডাল মাত্র তিন হাজার ৯০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে, যা একমাস আগে ছিল মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার মধ্যে।
এছাড়া গত দুই সপ্তাহে মণে প্রায় ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানিকৃত ছোলার দাম। দুই সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকা দরে, যা বর্তমানে দুই হাজার ৫৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ডাল ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ডাল জাতীয় প্রতিটি পণ্যের চাহিদা স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্যের সরবরাহও যথেষ্ট আছে। কিন্তু, আর্ন্তজাতিক বাজারে দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে পণ্যের বুকিং দর বৃদ্ধি এবং ঊর্ধ্বমুখী বাজারে লোকাল ট্রেডিংয়ের কারণে পণের বাজার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সনজয় দেব খোকন জানান, আমাদেরকে এখন বেশি দামে ডাল বিক্রি করতে হচ্ছে। আর শুধু ডাল নয় আমদানিকৃত অন্যান্য পণ্যেও দাম বেড়েছে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বৃদ্ধি ও ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে লোকাল বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। এছাড়া পণ্যের লোকাল ট্রেডিং ও আমদানিকারকদের কারসাজিতেও পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। সরকার যদি আমাদেরকে আমদানির ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না করে তা হলে কম দাম পণ্য বিক্রি এই মহুর্তে আমাদের পক্ষ্যে সম্ভব নয়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী মেসার্স তৈয়বিয়্যা ট্রেডার্সের মালিক সোলায়মান বাদশা জানান, আমরা আমদানিকারদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকি। যে দামে পণ্য ক্রয় করে সেই আলোকে আবার বিক্রি করে থাকি। অর্থাৎ তারা যখন আমাদের কাছে বেশি দাম রাখে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
রাজধানীর বাজারগুলোতে মসুর ডালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে মসুর ডালের দাম ছিল ৮৫ টাকা কেজি। এই সপ্তাহে সেই মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম বেড়েছে তিন শতাংশের মতো। গত আগস্ট মাসব্যাপী টিসিবি তাদের ট্রাক সেল কার্যক্রম পরিচাল না করে। পরে এক সম্পাহ কার্যক্রম বন্ধ রেখে আবারও ৪ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৪০০ বেশি ট্রাকের মাধ্যমে এই বিক্রি কার্যক্রম পরিচলানা করা হয়। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না কমায় আবার শুরু করা হয়েছিলো। তবে বাস্তবে কোনো প্রভাব পরছে না বাজারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, করোনাকালীন সমাজের উচ্চ শ্রেণির লোকেরা ছাড়া সব শ্রেণির লোকেরার চাপে রয়েছে। সমাজের দুটি শ্রেণিকে নিয়ে কথা হয় কিন্তু মধ্যবিত্ত নিয়ে তেমন কথা হয় না। যদি পণ্যের দাম বাড়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তাদের গোডাউনের মজুদকৃত পণ্য পেলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।