প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিবিএস
সোহেল রহমান : প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার’ (এনপিআর) প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’ (বিবিএস)। এটি হবে দেশের শূন্য থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের জনতাত্ত্বিক ও বায়োমেট্রিক তথ্যসহ একটি বিস্তৃত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিচিতিমূলক তথ্যভা-ার। এই জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টারে দেশের সকল নাগরিকের জনতাত্ত্বিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হবে এবং প্রত্যেকের জন্য একটি ১৬ ডিজিটের শনাক্তকরণ নম্বর দেয়া হবে, যার মাধ্যমে প্রত্যেককেই সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
এনপিআর প্রণয়নের প্রস্তুতি হিসেবে রোববার রাজধানীর আগারগাঁও-এর এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক কর্মশালার আয়োজন করে বিবিএস। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ-এর সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী’র সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার’ (এনপিআর) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সকল নাগরিক সুবিধাদি ও পরিসেবাসমূহকে আরও ফলপ্রসূ করতে সহায়তা করবে এবং সব ধরনের তথ্যেও জালিয়াতি শনাক্ত, নির্মূল ও নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টারে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার বিষয়টিও সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, কত দিনে কাজটি শেষ করা হবেÑ এর সুনির্দিষ্ট টাইম-লাইন ঠিক করে সময়মত কাজটি শেষ করতে হবে।
কর্মশালায় বিবিএস-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার’ (এনপিআর) প্রণয়নের অন্যতম কারণ হচ্ছেÑ দেশের সকল নিজস্ব নাগরিকদের শনাক্ত করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় জনতাত্ত্বিক উপাত্তসহ একটি বিস্তৃত পরিচিতি তথ্য ভান্ডার সৃষ্টি করা। এটি সরকারকে আরও ভালভাবে নীতি প্রণয়ন করতে এবং জাতীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
এছাড়া দেশে আঠারো বছরের ঊর্ধ্বদের (১৮+) জন্য ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ রয়েছে, কিন্তু ১৮ বছরের নীচের বয়সীদের জন্য কোন তথ্য ভান্ডার নেই। অন্যদিকে আঠারো বছরের ঊর্ধ্বদের (১৮+) জন্য ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ থাকলেও এর মাধ্যমে পারিবারিক ধারা (ফ্যামিলি ট্রি) নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে অন্যান্য দেশের মতো একটি ‘জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার’ (এনপিআর) প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী।
বিবিএস জানায়, এ তথ্য ভান্ডারের মাধ্যমে সকল ধরণের জনমিতিক পরিসংখ্যান, আগমণ-বহির্গমণ, জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ-তালাক ইত্যাদি সব কিছুর রিয়েল টাইম তথ্য-উপাত্ত তৈরি করা সম্ভব। পাশাপাশি দশ বছর পরপর বর্তমান জনশুমারির মতো বিশাল কর্মযজ্ঞের পরিবর্তে রেজিস্টার ভিত্তিক জনশুমারি করা সম্ভব হবে। ‘জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার’ (এনপিআর)-এর বহুমুখী সুবিধার কথা বিবেচনা করে এটিকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করেছে সরকার। এর মাধ্যমে দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।
কর্মশালায় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ-এর সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার’ (এনপিআর)-এর মাধ্যমে পারিবারিক ধারা তৈরি করা হবে এবং এটি এমন একটি রেজিস্টার যেখানে প্রতিটি মানুষকে জন্মেও পর পর অন্তর্ভূক্ত করা হবে এবং মৃত্যুর পরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তথ্য মুছে ফেলা হবে না। এতে করে ভূমি সংক্রান্ত মামলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা সম্ভব হবে।