দেড় শতাধিক প্রজাতির ফল চাষ করে সাফল্য দেখালেন কেন্দুয়ার ওয়াসিম
অর্থনীতি ডেস্ক : ফল সকল মানুষের প্রিয়। কিন্তু সকল মানুষই ফলের বাগান করতে পারে না। করলেও সবার ভাগ্যে সফলতা আসে না। এ বাক্যটিকে চ্যালেঞ্জে নিয়েই ফল বাগান করেন নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মনজাত গ্রামের মল্লিক আনোয়ার জাহিদ ওয়াসিম। নিজ বাড়িসহ নিজস্ব জমিতে ৭টি ফলের বাগান করেন। বাগানগুলোতে দেশি-বিদেশি ১৬৭ প্রজাতির ফল চাষ করে এলাকায় রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আড়াই একর (২৫০ শতক) জমিতে ফল ছাড়াও রয়েছে ঔষধি, বনজ, টক, ফুল ও বিভিন্ন প্রজাতির কাঠের গাছ। ৪ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে বাগান করে গত বছর ৮০ হাজার টাকার মালটা এবং ৩০ হাজার টাকার অন্যান্য ফল বিক্রি করেন ওয়াসিম। ফলচাষী ওয়াসিম জানান, এবারের গরম হাওয়ার কারণে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মালটাতেই বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি।
ওয়াসিম আরও জানান, এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। ২০১৮ সনের ১৪ জানুয়ারি পিতা আবুল কাশেম মল্লিক মারা যান। ৩ বোনের একমাত্র ভাই ওয়াসিম মাকে নিয়ে তার সংসার। এরেই মধ্যে ২ বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। নিজেও বিয়ে করে সংসারি হন। ১ বোন লেখাপড়া করছেন। তাদের অনেক বড় বাড়িটির সামনে-পেছনে প্রচুর জমি রয়েছে। পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তানের নেশা বৃক্ষরোপন। মা তাতে খুশিই হন। ছোট বেলা থেকে ওয়ামিমের বৃক্ষ রোপনের নেশা থাকায় স্কুল খরচের টাকা বাঁচিয়ে ২০০৫ সনে কেন্দুয়া উপজেলার বৃক্ষমেলা থেকে চারাগাছ কিনে এনে বাড়িতে রোপন করেন। ওয়াসিম জানান, বাবা-মা বকা দেবে ভেবে ২শ টাকায় কিনে আনা গাছকে ৫০ টাকায় এনেছেন বলে বাবা-মাকে বলতেন। তিনি আরও জানান, গাছের প্রতি তার অগাদ ভালবাসা। পিতা মারা যাওয়ার পর অন্য কিছু না করে বাগান করার সিদ্ধান্ত নিই। ২০১৮ সন হতে ফুল, ফল, কাঠ, বনাজি ও ঔষধি গাছ লাগিয়ে নিজের বসতবাড়িসহ ২৫ কাঠা অর্থাৎ ২৫০ শতাংশ নিজস্ব জমিতে সখের বশে ৭টি বাগান করেছি। এখন আমাকে দেখে অনেকেই বাগান করছেন।
বাগানে কি কি ফল আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে ১৪শ’ টাকা দিয়ে একটি মালটা গাছ কিনে এনে লাগাই। এ গাছে ২০/২৫ কেজি কড়া মিষ্টি এবং সুস্বাদু মালটা হয়েছিল। ফলে মালটা বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হই। পরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে শতাধিক প্রজাতির দেশি-বিদেশিী ফলগাছ এনে বাগান করি। উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে, পরিচর্যায় এবং পোকা মাকড় থেকে বাঁচাতে ঔষধসহ বাগান পরিচর্যাকারীদের বেতন- সব মিলিয়ে ৪/৫ লাখ টাকা বর্তমানে ব্যয় হয়েছে। এ প্রতিবেদককে বাগান ঘুরিয়ে দেখিয়ে বলেন- এগুলো হল- আম ঃ- কিউজাই, বারী-৪, বারী-১১, বারী-৮, ব্যানানা ম্যাঙ্গু, আম্রপলি, সূবর্ণারেখা, কুমড়াজালি, আমেরিকান রেড পালমার, সূর্যডিম, লক্ষনভোগ, মল্লিকা, নামদকমাই, জাম্বুরাআম, আমেরিকান ক্যান্ট, পুনাই হাইব্রিড, ইন্ডিয়ান ড্রপ, থাইওয়ান রেড, চিয়াং মাই, কিংঅফ চাকাপাপ, রত্নগিরি, গৌরমতি, থাইকাটিমন, থাই কাঁচামিঠা, বি-ওয়ান ডি-২০, ব্রনাই কিং, ব্যাকস্টোন, আলফানছো, থাই ওয়ান গ্রিন, পাকিস্তান চুষা ও বারোমাসী আমসহ দেশী আম। মালটা- বারি-২, ভিয়েতনামের খাটোমালটা, ইটালিয়ান নেভালরেন্স, পাকিস্তানি মালটা, ডোরাকাটা মালটা, অরটানিক অরেন্স। কমলা- চায়না কমলা, দার্জিলিং কমলা, নাগপুরি কমলা, ম্যান্ডারিন কমলা, পাকিস্তানি কমলা এছাড়া কয়েক জাতের আনার, বেদানা, নাসপাতি, আঙ্গুর, ড্রাগন, রামভূটান, পানবিলাস, লঙ্গান, কদবেল, সফেদা, শরিফা, আতাফল, থাই বড় জামরুল, থাই লম্বা জামরুল, বারোমাসি মিষ্টি জামরুল, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, ক্যান্সার নিরোধক করোসল, অ্যাভকাডো, স্টবেরি পেয়ারা, ত্বিনফল, পার্সিমন। আপেল- হরিমন-৯৯, কাশ্মেরী আপেল, রেড কাশ্মেরী আপেল, সামার আপেল, গোল্ডেন ডরসেট আপেল, আন্না আপেল এছাড়াও আলোভোকারা, বেল, জাপানী চেরীফল, গোলাপজাম, আনারস, লেবু, অরবরই, চালতা, মিষ্টিকুল, লিচু, বিলম্বু, করমচা, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, থাই বড়জাম্বুরা, আমড়াসহ দেশী আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে ইত্যাদি এবং আমলকী, হরতকী, বহেড়া, লজ্জাবতী, পাথরকুচি, এলোভেড়া, লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনি ও আকাশী, মেহগুনিসহ বহু দেশীয় গাছ রয়েছে। ওয়াসিমের বাগান সম্পর্কে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহাজাহান কবীর প্রশংসা করে বলেন, কেন্দুয়াতে এরকম সমৃদ্ধ বাগান আর চোখে পড়েনি। তার অনেক কালেকশন রয়েছে। আমি নিয়মিত তদারকি করছি- পরামর্শ দিচ্ছি। এই ফল বাগানের মাধ্যমে অনেক কিছু করা সম্ভব। আমিও তার সফলতা ছড়িয়ে দিতে চাই। সূত্র : চমকনিউজ