টিকা পেতে প্রবাসী শ্রমিকদের পদে পদে ভোগান্তি
শিমুল মাহমুদ : সৌদি প্রবাসী চাঁদপুরের শাহ আলম। এসএমএস পেয়ে ঢাকায় এসেছেন টিকা নিতে। দিনভর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের টিকা কেন্দ্রে অপেক্ষা শেষে ফিরে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ভিসার মেয়াদ আছে ৪২ দিন। মেসেজ পাইয়া টিকা নিতে আইলাম। ্এখন আরো এক সপ্তাহ পর খোঁজ নিতে বলছে।
আরেক প্রবাসী সুমন মিয়া। নোয়াখালি থেকে এসেছেন কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে। তিনি বলেন, প্রবাসী অ্যাপ বন্ধ। হাতে লিখে বিএমইটি’র ফরম পূরণ করেছি। এখন বিকাশে নিবন্ধন ফি নিচ্ছে না, ‘এমআরপি’ পার্সপোট হওয়ায় ব্যাংকেও টাকা নেয় না।
প্রবাসীদের অভিযোগ, সার্ভারের সক্ষমতা না থাকায় সশরীরে বিএমইটি’র নিবন্ধন করতে অনেক বেশি সময় লাগছে তাদের। আবার টিকা প্ল্যাটফর্ম সুরক্ষায় নিবন্ধন করার পর সময় চলে যাচ্ছে আরো ১৫-২০ দিন। ঢাকার বাইরের কোনো হাসপাতালে নিবন্ধন করতে না পারায় ভোগান্তি বাড়ছে। এছাড়া কোভিশিল্ড নামে পরিচিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকায় দ্বিতীয় ডোজের সময় প্রয়োজন হচ্ছে দুই মাস। এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে গিয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আর যেসব শ্রমিক টিকা না নিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে বাধ্যতামূলকভাবে হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ কারণে সব প্রবাসী শ্রমিক দেশে থাকতে টিকা নিতে চান।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান প্রবাসীদের জানান, বিদেশ যেতে চান যারা তাদেরই সমস্যা বেশি। কেউ মেসেজ পাননি, কেউ আবার মেসেজ পেলেও টিকা পাচ্ছেন না এমন লোকজন বেশি আসছেন। আবার এক কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু এই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসছেন। প্রতিদিনই অনেক প্রবাসী টিকা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আসছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের টিকা দানে স্বাস্থ্য অধিদ্প্তর অঙ্গিকারবদ্ধ। প্রবাসীদের জন্য কেন্দ্র বৃদ্ধি ও ফাইজারের টিকা পুনরায় চালুর বিষয়ে কাজ চলছে খুব শিগগিরই জানতে পারবেন।
প্রবাসীদের টিকা ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক কাজটি করে থাকে কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। এরপর তালিকা যাচাই করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সুরক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের।
প্রবাসীদের টিকা প্রদানের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে এই তিন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি বলে মনে করে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্র্যান্টস (বিসিএসএম)। সংস্থ্যাটির বলছে, করোনা মহামারির প্রভাবে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের ৮৫ শতাংশ পুরুষ কর্মী। ফিরে আসা এমন কর্মীরা গড়ে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেতন হারিয়েছেন। জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক আহমেদ বলেন, আমাদের শ্রমিকরা শিক্ষিত না। লেখাপড়া কম থাকায় এদের বিষয়ে টিকা কার্যক্রম আরো সহজ হওয়া দরকার। অনেক বেশি দাম দিয়ে হলেও প্রবাসীদের জন্য দ্রুত টিকা আনা, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধনের ফল জানানো, নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিএমইটিকে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। বিশেষ করে জেলা শহরগুলোতে অন্তত একটা কেন্দ্র খুলে দেওয়া দরকার।