যশোরে খাল খনন ও সøুইচ গেইট সংস্কারে সুফল পাচ্ছে চাষীরা
জাহিদুল মিলটন : যশোরের চৌগাছা উপজেলায় নির্মাণের আট বছর পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ধুনারখাল ও শুক্রখাল সøুইচ গেইট সংস্কার ও খাল দুটির পুনঃখননে শঙ্কা কেটেছে এ অঞ্চলের কৃষকের। রক্ষা পেয়েছে ১০ গ্রামের হাজার হেক্টর জমির ফসল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার স্বরুপদাহ-ধূনারখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির রক্ষণা বেক্ষণে থাকা সøুইচ গেইট দুইটি এলজিইডি তৈরি করে ২০১৩ সালে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সøুইচ গেইটের নীচের অংশের পাটা (লোহার ফাঁকা অংশ দিয়ে পানি যাতে চুইয়ে না বের হতে পারে এজন্য লোহার শীটের গায়ে রাবারের পাটা ব্যবহার করা হয়) ঠিকমতো কাজ করছিলো না। ফলে সøুইচ দু’টি দিয়ে পানি আটকানো যাচ্ছিলো না।
অন্যদিকে ২০১৩ সালে খাল খননের পর দীর্ঘ আট বছরে পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যায়। এতে চলতি বর্ষা মৌসুমে কপোতাক্ষ নদের পানি উজানে উঠে ১০ গ্রামের মাঠের ফসলী জমিতে ফের জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। তবে সমবায় সমিতির সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ¯øুইচ গেইট দুইটি সংস্কার, দুইটি খাল খনন, সমিতির অফিস সংস্কার করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। ফলে কপোতাক্ষের পানি উজানে উঠে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কেটেছে কৃষক ও গ্রামবাসীর।
স্বরুপদাহ-ধূনারখাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম রিংকু বলেন, চৌগাছা পৌরসভা ও স্বরূপদাহ ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ৭০০ হেক্টরের বেশি জমি বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত পানি মাধবপুর-খড়িঞ্চা বাওড়ে গিয়ে পড়ে।
বাওড়ের অতিরিক্ত পানি কপোতাক্ষ নদে যায় ধূনার খাল ও শুক্রখাল দিয়ে। কপোতাক্ষের নব্যতা হ্রাস পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বর্ষা মৌসুমে খাল দুটি দিয়ে নদের পানি উজানে উঠে বাওড় ও মাঠে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ভরা আউস মৌসুমের ধান ডুবে যেত। আমন ধান রোপন সম্ভব হতো না। নষ্ট হতো নানা ধরনের রবিশস্য ও সবজি। অন্যদিকে শুকনো মৌসুমে পানি কপোতাক্ষে নেমে যাওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে মাঠের শ্যালো মেশিন, গ্রামের টিউবঅয়েলে পানি উঠতো না। ফলে গ্রামগুলোর কৃষকরা চরম অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হতেন। এর থেকে কৃষকদের রেহায় দিতে ২০১২ সালে এলজিইডির পরামর্শে গ্রামগুলোর ৭০০ খানা নিয়ে সমবায় সমিতি গঠন হয়।
এলজিইডির শর্তানুযায়ী এক লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা সমিতির নামে ব্যাংকে এফডিআর করা হয়। পরে এলজিইডি এক কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুটি খালে দুটি ¯øুইচ গেইট, সমিতির অফিস নির্মাণ এবং খাল দুটি সংস্কার করে দেয়। ফলে মাঠের ৭০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি বাওড়ের মাছ ভেষে যাওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছিলো।
তিনি বলেন, কৃষকদের আশঙ্কার কথা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) জানানো হয়। তার প্রেক্ষিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে খাল দুটি পুনঃখনন, ¯øুইচ গেইট দুটি সংস্কার ও সমিতির অফিসকক্ষ সংস্কার করে দেয়া হয়েছে। ফলে কৃষকদের আশঙ্কা দূর হয়েছে।
স্বরুপদাহ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম বাবু বলেন, দীর্ঘদিন খাল ও ¯øুইচ গেইট সংস্কার না হওয়ায় আবারো গ্রামগুলোর বিস্তীর্ণ মাঠে পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন কৃষকরা।
বাঘারদাড়ী গ্রামের কৃষাণী শাকিলা আক্তার ও মাধবপুর গ্রামের অশোক হালদার বলেন, আগে যেসব ভোগান্তি হতো, এবারো সেরকম আশঙ্কায় ছিলাম। খাল দুটি পুনঃখনন ও ¯øুইচ গেইট সংস্কারে এখন আর সে ভোগান্তি হবে না।
চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মুনসুর রহমান বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি এলজিইডির সবচেয়ে ইফেক্টিভ একটি প্রকল্প। স্বরুপদাহ-ধুনারখাল প্রকল্পটি এলাকার মানুষের খুবই উপকারে এসেছিলো। সংস্কার না হওয়ায় তারা দুর্ভোগে পড়ার শঙ্কায় ছিলেন। তাদের সে শঙ্কা দূর করতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ লক্ষ টাকা খরচ করে খাল দুটি পুনঃখনন, সমিতির অফিস মেরামত, সøুইচ গেইটের সংস্কার করে দেয়া হয়েছে। আশা করছি এখন আবার নিশ্চিন্তে তারা চাষাবাদ করতে পারবেন। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও