বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে
শিমুল মাহমুদ: বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে একটু একটু করে গড়ে উঠছে আগামীর বাংলাদেশ। ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুন্ড জুড়ে প্রায় ৩৪ হাজার একর জায়গা জুড়ে নির্মাণ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এই শিল্পনগর পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে এখান থেকেই রপ্তানি হবে বছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। কর্মসংস্থান হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের ।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ইতিমধ্যে সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২৯টি শিল্প উৎপাদনে চলে গেছে। নির্মাণাধীন ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৩৯ শিল্প কারখানা নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
শুধু কলকারখানাই নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম পরিকল্পিত শহর, যেখানে থাকবে কর্ম পরিবেশের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনসহ সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা।
পর্যাপ্ত জ¦ালানি নিশ্চিয়তা এর সঙ্গে সস্তা শ্রম। অবাদ যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে সমুদ্র পথে। সব মিলিয়ে বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাত্র ৮টি অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হওয়াতেই বাংলাদেশ দৃষ্টি কাটতে শুরু করেছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের। ১৫৩টি প্রতিষ্ঠান এরি মধ্যে বিনিয়োগ করেছে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। তারা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে যদি ৫০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হয় এতেই বদলে যাবে আজকের বাংলাদেশ।
এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি আব্দুল মাতলব আহমাদ বলেন, মীরসরাই গিয়ে নিচ চোখে দেখলে মনে হবে একটা স্বপ্নের জায়গা তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের যে উজ্জল ভবিষ্যৎ আমরা এখানে দেখতে পাই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সংযোগের জন্য প্রস্তুত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় তাকিয়া থেকে দশ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘শেখ হাসিনা সরণি’। শিল্প নগরের অভ্যন্তরীণ অনেক সড়কের কাজ শেষ। বিশাল এই এলাকায় এখনই কাজে নিয়োজিত রয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। এদের কেউ বা কারখানা স্থাপনে, আবার কেউ বা যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজে নিয়োজিত।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১শ একর জমিতে হচ্ছে শেখ হাসিনা সরোবর। সেখানে থাকবে দুটি বিশাল জলাধার। এ পাশেই ১১২ একর জায়গায় হবে দুটি ৫ তারকা মানের হোটেল, রিসোর্ট, শপিং কমপ্লেক্স এবং সরোবরে থাকবে বিনোদনের ব্যবস্থা। প্রায় সাড়ে ৩শ ফুট উচ্চতার পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মিত হবে সেখানে। পুরো ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি হবে সবুজের সমারোহে নান্দনিক। একটি ইকো শিল্পনগর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে সামগ্রিক কার্যক্রম।
ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার ব্যাপক শিল্পায়নের লক্ষ্যে দেশে যে ১শ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে এই শিল্পনগরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। করোনায় স্থবিরতা এসেছিল। এখন গতি বাড়াতে হবে, যাতে অবকাঠামোগত কাজগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যায়।