এক বছরের জামিন পেলেন শাল্লার ঝুমন দাশ
অর্থনীতি ডেস্ক : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাশকে এক বছরের জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট। এই এক বছর সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি সুনামগঞ্জের বাইরে যেতে পারবেন না। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার ঝুমন দাশের জামিন মঞ্জুর করে। গত সোমবার আবেদনের শুনানিকরে বৃহস্পতিবার বিষয়টি আদেশের জন্য রেখেছিল আদালত।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। সঙ্গে ছিলেন নাহিদ সুলাতানা যুথি ও মো. আশরাফ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।
আইনজীবী আশরাফ আলী পরে বলেন, পর্যবেক্ষণসহ শর্তসাপেক্ষে আদালত ঝুমন দাশকে এক বছেরের জামিন দিয়েছে। আদালত তার নিয়মিত জামিন প্রশ্নে রুলও দিয়েছে।
হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেইসবুকে ‘আপত্তিকর পোস্ট’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে গত ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। সে সময় গ্রামের বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুর করা হয়। হিন্দুদের অন্তত ৯০টি বাড়িতে হামলা হয় সেদিন।
পরে ঐ ফেইসবুক পোস্টের জন্য ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে শাল্লা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। সেই মামলায় গত ছয় মাস ধরে কারাগারে বন্দি এ যুবক।
সুনামগঞ্জের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন না হওয়ায় ঝুমনের আইনজীবীরা জজ আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও জামিন আবেদন নাকচ হয়ে গেলে গত ২২ অগাস্ট হাই কোর্টে জামিন আবেদন করা হয়।
সোমবার শুনানি শেষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছিলেন, এটা কোনো মামলাই হতে পারে না। মামলা যাদের বিরুদ্ধে হওয়ার কথা তাদের বিরুদ্ধে না হয়ে মামলা করা হয়েছে ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে। ঝুমন দাশের মা যাও একটা মামলা করেছে, সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করার পর জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছে।
জেড আই খান পান্না বলেছিলেন, একটা মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মামুনুল হকের কর্মকা-, বক্তব্য নিয়ে সরকারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অনেক মন্ত্রী এমপি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মামুনুল হকদের কর্মকা- কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। ঝুমন দাশ বলেছিলেন, মামুনুল হকরা যা করছে তা পাকিস্তানি অ্যাক্টিভিটি। এ কথা সরকারও বলেছে। তাহলে ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে মামলা কেন?
ঝুমন দাশের গ্রেপ্তার এবং আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও হাই কোর্টের শুনানিতে প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনার তারিখ হচ্ছে ১৬ মার্চ। জব্দ তালিকা অনুযায়ী ঝুমন দাশের মোবাইল জব্দ করার তারিখ বলা হয়েছে ১৬ মার্চ, অর্থাৎ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওইদিনই। কিন্তু পুলিশ মামলা করেছে ২২ মার্চ। আর আদালতে হাজির করা হয়েছে ২৩ মার্চ। আসামিকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার কথা। প্রশ্ন হল এতদিন তাহলে ঝুমন দাশ কোথায় ছিলেন?
মার্চের ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ঝুমন দাশের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ঝুমন দাশের মুক্তির জন্য সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সূত্র : বিডিনিউজ, বাংলানিউজ, বাংলাট্রিবিউন। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত