লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ায় এপিএ বাস্তবায়নে ‘উত্তম’ অবস্থানে আইসিবি
সোহেল রহমান : সমাপ্ত অর্থবছরে ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ (আইসিবি)-এর বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর সঙ্গে সম্পাদিত এপিএ বাস্তবায়নে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাটি ‘উত্তম’ মান অর্জন করেছে এবং প্রাপ্ত মোট স্কোর হচ্ছে ৮৮.১৬। এর আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) আইসিবি’র অর্জিত স্কোর ছিল ৫৫.৭২, যা ‘চলতি মানের নীচে’রও কম।
প্রসঙ্গত: কোভিড পরিস্থিতিতে গত অর্থবছরে এপিএ’র অধিকাংশ সূচকে আইসিবি’র অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা এর আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। সংস্থার পারফরমেন্সের বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তনের পেছনে একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএ’র বিভিন্ন সূচকে সংস্থাটির অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরের আইসিবি প্রায় সবকটি সূচকে সফলতা অর্জন করলেও ইক্যুইটি ও ঋণ সূচকে ‘সন্তোষজনক’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এ খাতে অর্থ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে বিতরণ করেছে ৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৮ শতাংশ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে আইসিবি’র বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরে সংস্থাটির বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
একইভাবে প্রতিষ্ঠানটির মার্জিন ঋণ বিতরণ, ইক্যুইটি ও ঋণ হিসেবে অর্থ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে। গত অর্থবছরে আইসিবি’র মার্জিন ঋণ এবং ইক্যুইটি ও ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩০০ কোটি টাকা এবং ২৫ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ দুই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৮০০ কোটি টাকা ও ৪০ কোটি টাকা।
এছাড়া গত অর্থবছরে দেশের উভয় স্টক একচেঞ্জে আইসিবি’র লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৭ কোটি টাকা। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অন্যান্যের মধ্যে গত অর্থবছরে আইসিবি’র প্রকল্প ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত অর্থবছরে ইতোপূর্বে বিতরণকৃত মার্জিন ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫০ কোটি টাকা।
আইসিবি’র মতে, কোভিড-১৯-এর কারণে সংস্থার নিট মুনাফা ব্যাপক কমে যাওয়ার বিপরীতে সুদ ব্যয় তথা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা; পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে স্বল্প সুদে ও দীর্ঘ মেয়াদে পর্যাপ্ত তহবিল প্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা; বিগত সময়ে পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের কারণে বিপুল পরিমাণ মার্জিন ঋণ অনাদায়ী থাকা ও বিনিয়োগকারীদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস; প্রকৃত, সম্ভাবনাময় ও দক্ষ উদ্যোক্তার অভাব; পণ্য ও সেবা বৈচিত্র্যের অপ্রতুলতা; শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে প্রতিবন্ধকতা; আইসিবি’র ন্যায় সমজাতীয় একক কোনো বড় প্রতিষ্ঠান না থাকায় বিনিয়োগ প্রত্যাহারে প্রতিবন্ধকতা এবং রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে ইক্যুইটি মার্কেটের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীলতা সংস্থাটির প্রধান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও