রাজধানীর যানজট কমাতে রেলকেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা বাড়ানোয় গুরুত্ব
অর্থনীতি ডেস্ক : বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন গণপরিবহনে বাসকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছে, সেখানে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ঘটছে উল্টো ঘটনা। ঢাকার রাস্তায় দিনকে দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়ছে না গণপরিবহনের সংখ্যঅ।
এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির মধ্যে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার যথাক্রমে ৪৯ ও ১৮ শতাংশ বাড়লেও গণপরিবহন বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ।
এদিকে নানা উন্নয়ন কর্মকা-ে সংকুচিত হচ্ছে চলাচলের পথও। যে কারণে বাড়ছে যানজট, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাতায়াত ব্যবস্থার অপ্রতুলতার পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলের উপযোগী না থাকাই এর অন্যতম কারণ। তারা রাস্তাঘাট উন্নয়নের পাশাপাশি গণপরিবহনে সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়েছেন। গুরুত্ব দিয়েছেন রেলকেন্দ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা বাড়ানোর দিকে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্যানুযায়ী, ২৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাজধানী ঢাকা শহরে বর্তমানে খাতা-কলমে বাস রুটের সংখ্যা ২৯১টি। এই সংখ্যক রুটে আড়াই হাজার কোম্পানির ৩০ হাজার গাড়ি চলাচল করে।
জানা গেছে, এসব রুটের মধ্যে কিছু বর্তমানে অকার্যকর। আবার অনেক জায়গায় রুট থাকলেও নামমাত্র বাস চলাচল করে। আবার এমন অনেক রুট আছে সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বাসের সংখ্যা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে ঢাকার রাস্তায় তিন হাজার ৬৪৩টি বাস-মিনিবাস নামানো হলেও ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নামানো হয় ২ হাজার ১০৭টি। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে ২২০টি বাস-মিনিবাস। এর মধ্যে ৯৭টিই ঢাকাতে। তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ঢাকা শহরে মোট নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭টি। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখেরও বেশি।
সুত্র মতে, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীতে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি আট লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৫টি, যা মোট গাড়ির ৪৯ শতাংশ। প্রাইভেটকার নিবন্ধিত হয়েছে তিন লাখ ৮ হাজার ৮৬০টি, যা মোট গাড়ির ১৮ শতাংশ। আর বাসের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৯৭৮টি, যা মোট গাড়ির ২ শতাংশ।
এই চিত্রই বলে দিচ্ছে, রাজধানীর সড়কে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় গণপরিবহন তেমন বাড়ছে না। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষা বলছে, ঢাকায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দিনকে দিন যানজট তীব্র হচ্ছে।
কয়েকটি সংস্থার তথ্য মতে, এই দীর্ঘ যানজটে গড়ে দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আর বছরে যানজটে ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ হাজার কোটি টাকা।
বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে দীর্ঘদিন ধরে রুট পারমিট স্থগিত থাকাকে দায়ী করেছেন ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীতে রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ রেখেছে সরকার। ব্যবসায়ীরা নতুন বাস নামিয়ে যাবে কোথায়? এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আরোপিত বিধিনিষেধের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ঢাকায় রুট পারমিট স্থগিত রাখা হয়েছে। তা কবে তুলে নেওয়া হবে, কিংবা আদৌ চালু হবে কি না তা জানা নেই। সরকার যদি নতুন করে রুট পারমিট না দেয়, তাহলে পুরানো রুটেই ভাঙাচোরা গাড়ি বাদ দিয়ে নতুন গাড়ি নামানো হবে।
বাসের সংখ্যা ও সেবার মান কমে যাওয়ার পেছনে পরিকল্পনা ও উপযুক্ত নীতিমালার অভাবকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
নগর পরিকল্পনাবিদ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সরকার সড়ককে যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছে, পরিবহন খাতকে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। রাজধানীর উন্নয়নে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিবহন খাত নিয়ে প্রণয়ন করা আছে আরএসটিপি। এই দুটির সমন্বয় ঘটিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেই পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আসবে। এরপর পৃষ্ঠা ৭, সারি