রেমিটেন্স আয় কমার পাশাপাশি বাড়ছে ডলারের দাম
মো. আখতারুজ্জামান : গত বছর বিশ্বব্যাপী করোনার শুরুর দিকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। তবে সেই তুলনায় গত তিন মাস ধরে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় কমেছে। গত বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় চলতি বছরের আগস্ট মাসে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ কমেছে ৮ শতাংশ। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ও তেমন বাড়ছে না। আবার আমদানি ব্যয় বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক। এর প্রভাব পড়েছে মার্কিন ডলারের দামের উপর। বর্তমানে এক ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৯ টাকায়। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি পণ্যের বাজারে বড় ধরণের প্রভাব পড়বে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজারের ডলারের ঘাটতির কারণে বাড়ছে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম। ফলে টাকার মান কমে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৩০ পয়সা যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মূল্য। তবে খোলাবাজার ও নগদ মূল্যে ডলার ৮৮ থেকে ৮৯ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে। এখন বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর গত আগস্ট মাসের শুরুতে হঠাৎ টাকার বিপরীতে বাড়তে শুরু করে ডলারের দাম যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ৮৫ টাকা ৩০ পয়সা দরে ডলার লেনদেন করছে। মাসের শুরুতে গত ২ সেপ্টেম্বর এ দর ছিল ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। আর গত মাসের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এ হিসাবে ৩৪ কর্মদিবসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে ৫০ পয়সা দর হারিয়েছে টাকা। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই থেকেই ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা স্থিতিশীল ছিল ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি দীর্ঘদিন কম ছিল। এখন সেই চাপটা বাড়ছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় মূলধনীয় যন্ত্রপাতি ও পণ্য আমদানি বেড়েছে। ফলে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। ফলে টাকার বিপরীদের ডলারের দাম বেড়েছে।
জানা যায়, গতকালও ১০০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে অর্থাৎ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৭৮৬ মিলিয়ন ডলার বাজারে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মহামারির শুরুর দিকে প্রবাসী আয়ে যে চাঙা ভাব ছিল, চলতি বছরের জুন থেকে সেখানে নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ১৮১ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।
গত বছরের আগস্টে রেমিটেন্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার আগস্টে রেমিটেন্স কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। একইভাবে রপ্তানি আয়ও কম হয়েছে। গত জুলাই-আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে দশমিক ৩১ শতাংশ। গত বছরের জুলাই মাসে আমদানি বাবদ ৪২২ কোটি ডলার খরচ করেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের জুলাইয়ে খরচের এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে আমদানি খরচ বেড়েছে ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এসব কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ছে।
গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশির ভাগ ব্যাংক প্রতি ডলারে ৮৫ টাকা ৩৫ পয়সা পর্যন্ত নিচ্ছে। তবে নগদ ডলারের মূল্য বেশির ভাগ ব্যাংকে ৮৭ টাকার উপরে রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকে নগদ ডলারের মূল্য ৮৮ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সবশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, নগদ ডলারের দর সবচেয়ে বেশি উঠেছে ব্র্যাক ও এনআরবিসি ব্যাংকের। ব্যাংকগুলোর নগদ ডলারের দর ছিল ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা। এ ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংকই ৮৭ টাকা থেকে ৮৮ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মহামারি করোনার শুরুর দিকে প্রবাসী আয়ের চাঙ্গাভাব চলতি বছরের জুন থেকে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত বছরের জুলাই মাসে আমদানি বাবদ ৪২২ কোটি ডলার খরচ করেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের জুলাইয়ে খরচের এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে আমদানি খরচ বেড়েছে ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এসব কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ছে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও