চলতি বছর ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ৭৭০ টন ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা
অর্থনীতি ডেস্ক : ইলিশের প্রজনন মৌসুমে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ মাছ নদীর মোহনায় ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর কেজি হিসেবে প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজার কেজি বা ৭৭০ মেট্রিকটন ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে।
গত বছর দেশের নদী মোহনাগুলোতে ৫১.২ শতাংশ মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। যার পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫ কেজি বা ৭৫৭ মেট্রিক টন।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের (ইলিশ) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং কেন্দ্র প্রধান ড. মো. আনিসুর রহমান জানান, ইলিশ প্রাকৃতিক সম্পদ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এর উৎপাদন বৃদ্ধি ও কমা নির্ভর করছে। তবে ইলিশ মাছ সারা বছরই কমবেশি ডিম ছাড়ে তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে অধিকাংশ মা মাছ ডিম ছাড়ার সময়ে মিঠা পানির নদ-নদীর মোহনায় চলে আসে।
৩০ বছর ধরে ইলিশ নিয়ে গবেষণা করা এই মৎস্য বিজ্ঞানী বলেন, আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি, ২০১৬ সাল দেশের নদ-নদীতে মা ইলিশ ৪৩.৯৫ শতাংশ ডিম ছেড়েছিল । পরিমাণ হিসেবে ৫ লাখ ৯৯ হাজার৭২০ কেজি বা ৫৯৯.৭২ মেট্রিকটন । ২০১৭ সালে মা ইলিশের ৪৬.৪৭ শতাংশ ডিম ছেড়েছিল। পরিমাণ হিসেবে ৬ লাখ ২৮ হাজার ২৯১ কেজি বা ৬২৮.২৯ মেট্রিকটন। ২০১৮ সালে মা ইলিশ ৪৭.৭৫ শতাংশ ডিম ছেড়েছিল। পরিমাণ হিসেবে ৭ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৯ কেজি বা ৭২৮.৩৩ মেট্রিকটন। ২০১৯ সালে মা ইলিশ ৪৮.৯২ শতাংশ ডিম ছেড়েছিল। পরিমাণ হিসেবে ৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৬৮ কেজি বা ৭৪১ মেট্রিকটন।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণত ৪০ শতাংশ ইলিশ মাছ ডিম ছাড়তে পারলেই সেটাকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে আমরা এখন এ থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা করি। মা ইলিশ যে পরিমাণ ডিম ছাড়ে তার থেকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ডিম ফুটলে এ থেকে প্রায় ৪০-৫০ হাজার কোটি ইলিশের পোনা পাওয়া সম্ভব, যা পরবর্তী সময়ে ছোট ইলিশ বা জাটকায় পরিণত হয়ে থাকে। তবে এ বছর গত বছরের চেয়ে বেশি ডিম ছাড়বে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা বন্ধ, জাটকা রক্ষার কার্যক্রম ও অভয়াশ্রম চিহ্নিত করণসহ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো মাঠ প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে পরিপালনের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে গবেষকদের নিত্য নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। এরই ধারাবাহিকতায় ইলিশ প্রজনন মৌসুম ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়েছে। দেয়া হচ্ছে জেলেদের খাদ্য সহায়তাসহ নানা প্রণোদনা। এ বছরও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি পালনে দেশে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মৎস্য বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের এক জরিপে উঠে আসে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৫৬ হাজার টন ইলিশের উৎপাদন করা যায়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, চলতি বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসেবে (৪-২৫ অক্টোবর) পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এসময়ে একটি আমাবস্যা (৫ অক্টোবর) এবং একটি পূর্ণিমা (১৯ আগস্ট) পাওয়া যাবে। এ সময়েই মূলত মা মাছ ডিম ছাড়ে। ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের জন্য ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩৭ জেলার ১৫১টি উপজেলায় মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ সময়ে ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন এন্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’ এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন এন্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী এ বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারী করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৩৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। সূত্র : বার্তা২৪। সম্পাদনা : শোভন দত্ত