করোনার প্রভাবে হাজারো নাবিক জাহাজ থেকে ফিরতে পারছে না
মো. আখতারুজ্জামান : শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ঘরে এবং জাহাজে উভয় ক্ষেত্রে নাবিকরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। শত সহস্র নাবিক জাহাজ থেকে ফিরতে পারছে না, একইভাবে যোগদান করতে অসামর্থ্য হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, বাইরে বের হওয়ার ব্যপারে কড়াকড়ি, নাবিক পরিবর্তনে এ জটিলতা এসব বিষয় করোনার কারণে এক কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নাবিকদের দিকে সমগ্র বিশ্ব সংস্থা ও নৌ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। নাবিক হওয়া একটি মহৎ এবং বিশ্বের প্রাচীনতম পেশা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব নৌ দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নৌপরিবহন অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
নূরুল মজিদ বলেন, বিশ্বে মেরিটাইম এবং শিপিং শিল্পে প্রচুর ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। অনাদিকাল থেকে নাবিক হওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন একটি পেশা। আমাদের সরকার সুশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত নাবিক তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে। মাধ্যমে বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারে আরও ভাল সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এই বছরের জন্য বিশ্ব নৌ-দিবসের প্রতিপাদ্য নাবিকরাই নৌপরিবহন ব্যাবস্থার মূল ভবিষ্যত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, খাতটি শক্তিশালী করতে দক্ষ জনবল গঠনেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনায় নৌখাতে অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে।
তিনি আরও বলেন, , ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সড়ক ও রেলপথের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নৌ-খাত। বন্ধ নৌপথ চালু ও নতুন নতুন পথ চালু হওয়ায় সারাদেশে নৌ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে শুরু করেছে। এক সময় অর্থনৈতিক খাতের অন্যতম নিয়ামক আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওশান গোয়িং শিপ ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রামের কমান্ড্যাযন্ট নৌ প্রকৌশলী ড. সাজিদ হোসেন এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন কেএম জসীমউদ্দিন সরকার। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এ জেডএম জালাল উদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্েযাগে নৌপরিবহন অধিদপ্তর আন্তর্জাতিকমানের মেরিটাইম প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র প্রদান কার্যক্রমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থা (আইএমও) এর হোয়াইট লিস্টে অন্তর্ভুক্তি বজায় রেখে দক্ষ জনবল সৃষ্টিসহ জাহাজে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছে।
সরকার নৌ সেক্টরের উন্নয়নের লক্ষ্যে নৌ পথের সংরক্ষণ ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সকল নদীকে দখলমুক্ত করা এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা এবং সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আগের চেয়ে নৌপথ এখন অনেক বেশি নিরাপদ এবং পরিবেশ বান্ধব। অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নতুন অনলাইন সেবা উদ্বোধন করা হয়।
নৌপরিবহন সেক্টরে বিশেষ অবদানের জন্য পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন শিপ একুইজিশনের জন্য এস আর শিপিং লিমিটেড, গ্রিন শিপ রিসাইক্লিনিংয়ের জন্য পিএইচপি শিপ রিসাইক্লিন, শিপ ফেয়ারার্স এমপ্লয়মেন্টের জন্য হক এন্ড সন্স লিমিটেড, মেরিটাইম ট্রেনিংয়ের জন্য বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি এবং সাগরে সাহসিকতার জন্যজ এম ভি জাওয়াদ জাহাজের ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন।