আলুর দাম কম, দিশেহারা বগুড়ার আলু চাষী
আব্দুল ওয়াদুদ : বগুড়ার শিবগঞ্জে আলুর বাজারে ধ্বস, হতাশায় আব্দুল বারিক (৩০) নামের এক ব্যবসায়ী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, উপজেলার শিবগঞ্জ ইউনিয়নের এরুলিয়াপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম মন্ডল এর ছেলে বিশিষ্ট আলু ব্যবসায়ী আব্দুল বারিক (৩০) কয়েক মাস পূর্বে ৫ হাজার বস্তা পাকড়ি ও এস্টারিক্স আলু কৃকষদের নিকট থেকে ক্রয় করে লাভের আশায় মোকামতলা বাজার এলাকার আর.এন.আর পটেটো কোল্ড স্টোরেজ হিমাগারে সংরক্ষণ করেন।
বর্তমানে আলুর বাজার কমে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন আব্দুল বারিক। সে ২৬ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে মোকামতলা বাজারের ওই স্টোরে গিয়ে আলুর বাজার যাচাই করেন। নিম্নমুখী আলুর বাজার ধ্বস অবস্থা দেখে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরেন। তৎক্ষনাৎ তাকে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। এ ব্যাপারে নিহত আব্দুল বারিক এর স্ত্রী মুন্নী বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন আলু ব্যবসায়ী, আলুর বাজার মন্দ হওয়ার কারণে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। নিহতর চাচা শিস মাহমুদ বলেন, ৫ হাজার বস্তা আলু রেখেছেন স্টোরে, তিনি বলেন, প্রতি বস্তা আলু ১২ শত টাকা দামে ক্রয় করেছেন, যাহার মূল্য ৬০ লক্ষাধিক টাকা। বর্তমানে, ৫ হাজার বস্তা আলুর দাম ১৫ লক্ষ টাকা ও হবে না।
বগুড়া ও জয়পুরহাটের হিমাগারে বর্তমানে সচারাচর প্রতি কেজি আলুর পাইকারি দাম ছিল ১০ টাকা। কিন্তু উৎপাদন থেকে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত এক কেজি আলুর পেছনে কৃষক ও ব্যবসায়ীর খরচ হয়েছে ১৮ টাকা। এই হিসাবে হিমাগারে আলু রেখে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে ৮ টাকা করে লোকসান গুনছেন।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, বগুড়া-জয়পুরহাটের ৫৫টি হিমাগারে এবার ৫ লাখ টনের বেশি আলু সংরক্ষণ করা আছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ টন বীজ আলু। বাকি প্রায় ৪ লাখ টন এখন বিক্রির জন্য আছে। ফলে গতকালের হিসাবেই এই দুই জেলার আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা ৩২০ কোটি টাকা লোকসানের মুখে আছেন।
বগুড়ার মোকামতলা আর অ্যান্ড আর পটেটো কোল্ড স্টোরেজে গতকাল অ্যাসটরিক জাতের আলু প্রতি বস্তা ৬০০ টাকা, দেশি পাকরি ও ডায়মন্ড জাতের আলু ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অ্যাসটরিক জাতের আলু প্রতি বস্তায় খরচ ১ হাজার ১১০ টাকা। পাকরি ও ডায়মন্ড জাতের আলু প্রতি বস্তার উৎপাদন থেকে হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ২৫ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। হিমাগারে দাম কম থাকলেও কারওয়ান বাজারে আলুর পাইকারি দাম ১৮ টাকা। মোলামগাড়ী নর্থপোল কোল্ডস্টোরেজের মহাব্যব¯’াপক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এবার আলু নিয়ে আমরা ও চাষি এবং আলু ব্যবসায়ীরা দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছি। কারণ, প্রায় সময় বছরের এই সময়ে সংরক্ষণের আলু পরিমাণ যা থাকে তার প্রায় ৮০ ভাগ চলে যায়। কিন্তু এবার ২০ ভাগ আলু হিমাগার থেকে বের হয়নি। দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের ভয়ে আলু তুলছেন না কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাতে হিমাগার মালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা সমভাবে ক্ষতির মুখে পতিত হচ্ছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. দুলাল হোসেন, গত মৌসুমে পাঁচ বার বন্যা হওয়ার কারনে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও এবং দাতা সংস্থাগুলো ত্রাণ বিতরণের তালিকায় আলু ছিল। তাই বিগত বছরে আলুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ মৌসুমে রেকর্ড পরিমান আলু উৎপাদন হয়েছে অন্যদিকে বন্যা হয়নি। অন্যান্য সবজির যথেষ্ট উৎপাদন হয়েছে। তাতে আলুর চাহিদা কমেছে। আবার বগুড়া অঞ্চল থেকে অন্য জেলায়ও আলু খুব একটা যায়নি। সব মিলিয়ে আলুর বাজারমূল্য কমে গেছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে এবার আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, সারা দেশে ৪০৫টি হিমাগারে এবার ৫০ লাখ টন আলু আছে। প্রতিবার আগস্টের মধ্যে সাধারণত বেশিরভাগ আলু হিমাগার থেকে বের হয়ে যায়। বাজারে চাহিদা না থাকায় এবার এখন পর্যন্ত ১০ ভাগ আলুও হিমাগার থেকে বের হয়নি। আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে মাত্র ১০ লাখ টন আলু হিমাগার থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক আরও বলেন, গত বছর হিমাগারে আলু সংরক্ষিত হয়েছিল ৪৭ লাখ টন। আলুর চাহিদা ছিল বেশি। গতবার পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর বাজারমূল্য ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক-ব্যবসায়ীরা লাভ করেছেন ভালো। এবার আলু নিয়ে সংকট তীব্র হয়েছে। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও