পণ্যের সঠিক দাম নির্ধারণের সময় এসেছে : বিজিএমইএ সভাপতি
মো. আখতারুজ্জামান : জিএসপি সুবিধাটি এক রাজনৈতিক ইস্যু হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা (ডিউটি ফ্রি) ফেরত পাওয়া সহজ হবে না বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। এক মাসের যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরে শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক খাত কখনও জিএসপির আওতায় ছিল না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধান অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৯৭ শতাংশ পণ্যে উন্নতি দেশগুলো শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দিতে বাধ্য। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র সুকৌশলে ওই ৯৭ শতাংশ পণ্যের শধ্যে আমাদের তৈরি পোশাক খাতকে রাখে নাই। তারপরও সফরে এ বিষয়ে কথা বলেছি। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সম্মেলনে সভাপতি ৭টি সমস্যার কথা জানান। সেইসঙ্গে এগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- শ্রমিক কর্মচারিদের বেতান-ভাতা প্রদানের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা ১৮টির পরিবর্তে ৩৮টি করার দাবি জানান; লোকাল ব্যাক টু ব্যাক ঋণেপত্রের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহীত কাঁচামাল, সুতা ও আনুশাঙ্গিক দ্রবাদির ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়ার হাউজ লাইসেন্স থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়া; গ্রুপ অব কোম্পানির একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপী হলে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ না করা; বন্ড লাইসেন্সে কাঁচামালের বিবরণ অন্তর্ভূক্তির জটিলতা নিরসন করা; সুতা থেকে নিট গার্মেন্টস উৎপাদনের অপচয় হার বৃদ্ধির কারণে জরিমানা আরোপ না করা; বিমান বন্দরে রপ্তানিপণ্য ত্বরিত স্ক্যানিং করার জন্য স্থাপিত ইডিএস মেশিনগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং বেনাপোল বন্দরসহ অন্যান্য স্থলবন্দরের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় তুলা, সুতা, কাপড় ও পোশাকখাতের কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন প্রদানের দাবি জানানো হয়।
তিনি বলেন, ইউরোপ আমাদের প্রধান বাজার। যেখানে আমাদের ৬০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তোরণের মাধ্যমে এই বাজারটিতে আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় পরিবর্তন আসবে। যদিও বর্তমান সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর পরও যেন আরওন অন্তত ১২ বছর এই সুবিধা বহাল রাখা হয় তার জন্য সরকার এবং বিজিএমএইএ একসঙ্গে কাজ করছে।
ফারুক হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মাসব্যাপী এই ছফরে বেশকিছু অর্জন হয়েছে। আমাদের পণ্যের অডার ও দাম বাড়বে। আমাদের প্রতি তাদের ব্যবহার আগে তুলনায় ভালো হবে। আগে যেভাবে আমাদেরকে খারপ চোখে দেখত এখন সেটা কেটে যাবে।
গতবছরের তুলনায় এখন তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। আশা করছি এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। তবে যেভাবে র-মেটারিয়ালের দাম বাড়ছে সেভাবে আমাদের তৈরিকৃত পণ্যের দাম বাড়েনি। এখন আমাদের কাজ হবে পণ্যের দামের বিষয়ে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা। পোশাক খাত আমাদের গর্ব, এই খাতকে ঘিরে আছে কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা। আগামী দিনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ভিশন তৈরি করেছে। তা অর্জনে পোশাক শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এই শিল্পের সক্ষমতা, টেকসই পরিবর্তন আর ইতিবাচক দিকগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরতে না পারলে সম্ভাবনা কাজে লাগানো কঠিন হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় অঙ্গনে শিল্পের প্রকৃত ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বিজিএমইএ সব সময়ই সচেষ্ট রয়েছে।
তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, গত দুই বছরে কোভিড -১৯ মহামারির কারণে আমরা অনেকটাই অবরুদ্ধ ছিলাম। অথচ বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের অংশ হিসেবে আমাদেরকে নিয়মিত স্টেকহোল্ডাদের সাথে আলোচনা করতে হয়, শিল্প ও অর্থনীতি কোথায় আছে, সর্বশেষ পরিস্থিতি কি, তা তাদের জানাতে হয়। সেই তাগিদ থেকে আমরা আমাদের রপ্তানি বাজারে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি। আর সেই উপলব্ধি থেকেই গত ১ মাস অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসির উদ্যোগ হিসেবে প্রথম ধাপে আমাদের অন্যতম রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট ও কানাডা সফর করেছি। সেখানে ফ্যাশন সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার বিশেষ করে ক্রেতা ও ব্র্যান্ড এসোসিয়েশন প্রতিনিধিসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সহযোগি প্রতিষ্ঠান এবং সেসব দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সাথে বৈঠক করেছি। অনেক সভায় অংশ নিয়েছি। শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় দেশ ও অর্থনীতি বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেছি।
বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, ইউরোপ আমাদের প্রধান বাজার। সেখানে আমাদের পোশাক ৬০ শতাংশ রপ্তানি হয়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের মাধ্যমে এই বাজারটিতে আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় পরিবর্তন আসবে। যদিও বর্তমান সুবিধা ২০২৯ পর্যন্ত থাকবে। এরপরও যেন আরও অন্তত ১২ বছর এই সুবিধা বহাল রাখা হয় তার জন্য সরকার এবং বিজিএমইএ একসাথে কাজ করছে।
তিনি জানান, তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমকে আরও ত্বরানি করতে বিজিএমইএ উন্নত দেশগুলোর দূতাবাস এবং বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। জার্মান ব্র্যান্ড কেআইকে আমাদের পোশাক কর্মীদের ভ্যাকসিনেশনের জন্য বিজিএমইএ-কে অনুদান প্রদান করেছে। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রদান করা হবে।