আলীবাবায় ধর্ষণের জের চীনে ‘ব্যবসায়িক মদ্যপান’ রীতি নিষিদ্ধ হতে পারে
সালেহ্ বিপ্লব : গত আগস্টের ঘটনা। আলীবাবার এক ব্যবসায়িক বৈঠকে মদ খেয়ে বেসামাল ছিলেন সবাই। হোটেল রুমে নিজেদেরই এক কর্মীকে ধর্ষণ করেন আলীবাবার পদস্থ কর্মকর্তা। ঘটনা জানাজানি হলে আলীবাবা ঐ ম্যানেজারকে বরখাস্ত করে। বিবিসি
আগস্ট থেকেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। চীনে কাজের মধ্যেই কজন মিলে মদ্যপানের যে রীতি, সেটিকে দুষছেন নেটিজানরা। বিভিন্ন অফিস যে তার কর্মচারীদের মদ্যপানে বাধ্য করে, সেটি নিয়েও কড়া সমালোচনা হচ্ছে।
মিংজি (ছদ্মনাম) নামের এক নারী জানিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতা। তিনি গুয়ানজুতে থাকেন, পেশায় জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ। প্রতি দু’সপ্তাহে অন্তত একবার তাকে কোম্পানির নির্দেশে বিজনেস ড্রিঙ্কে অংশ নিতে হয়। এটা এমন শুধু নয় যে, পাবে বসে পাইন্টের পর পাইন্ট তরল গেলা। এটি বরং ভিন্ন।
মুখে জোর করে হলেও হাসি ধরে রেখে কোম্পানির বিজনেস ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। ২৬ বছন বয়স্ক মিংজি বলছিলেন, আমি একদমই স্বচ্ছন্দ হতে পারি না।
আমি জানি, মদ্যপানের ব্যাপারে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়। তবুও ভয় হয়, কখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় কি না।
তিনি বলেন, মাঝে মাঝে পুরুষরা এসব পার্টিতে সস্তা দরের যৌনগন্ধী গল্প বলে। হাসিমুখেই শুনতে হয় এবং এমন ভাব করতে হয়, যেনো খুব মজার কোনো জোকস বলেছেন তিনি।
মিংজি যে অভিজ্ঞতার কথা জানান, একই রকম জানিয়েছেন বেসরকারি খাতে কর্মরত আরো অনেকে।
আগস্ট মাসেই এক ব্যাংক কর্মকর্তা তার সিনিয়রের অফার করা মদেও গ্লাস ফিরিয়ে দিলে সিনিয়র প্রকাশ্যেই তাকে চড় মারেন।
জুলাইতে এরকম মদ্যপানের সুযোগ নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন চীনের সবচেয়ে বড়ো সেলিব্রিটিদের একজন, চীনা-কানাডিয়ান ক্রিস উ।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে এক প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি গার্ড অতিরিক্ত মদ্যপানে মারা যান। তার বস তাকে মদ্যপানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাধ্য করেছিলেন। আর যারা এতে অংশ নিয়েছিলো, তাদেরও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়েছিলো।
এরকম অনেক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে একের পর এক। এসব বিষয় বিবেচনায় এনেই ২০১৬ সালে চীন সরকার কাজের সময় সরকারি কর্মচারিদের জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বেসরকারি খাতে ব্যবসায়িক যোগাযোগে মদ্যপান রীতি হিসেবেই প্রচলিত। আর এই বাধ্যতামূলক মদ্যপানের বিরুদ্ধে চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তুমুল প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজনেস মিটিং-এ বাধ্যতামূলক মদ্যপানের দিন বোধ হয় শেষ হতে চলেছে।
ডেক্সিউ কনসাল্টিং-এর কর্মকর্তা লিউ বলেন, বিজনেস ড্রিংকিং আমাদের বহু পুরানো রীতি। শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় আলীবাবার ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হওয়ায় এই রীতি বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
তবে আলীবাবার কেলেংকারির পর সিইও ঝেং এই বলে কর্মচারিদের আশ্বস্ত করেন যে, বিজনেস ড্রিংকিং বন্ধ করার তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিনি।
তার কয়েকদিনের মধ্যেই চীনের দুর্নীতি পর্যবেক্ষক সংস্থা কাজের মধ্যে মদ্যপানের চর্চা বাদ দেয়ার আহ্বান জানায়। তারা এও বলেছে যে, বেসরকারি খাত তাদের আহ্বান শুনছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য মনিটরিং জোরদার করা হবে।