ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের সিইও গ্রেপ্তার
সুজন কৈরী : ই-কমার্স ব্যবসার নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কিউকম সিইও রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ। রোববার ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে মতিঝিল জোনাল টিম।
সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ভিত্তিতে কিউকমের সিইওকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তার বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় এক ভুক্তভোগী গ্রাহক ডিজিটাল নিরাপত্তা ও অপরটি প্রতারণার অভিযোগের দুই ধারায় মামলা করেন।
হাফিজ আক্তার বলেন, করোনাকালীন ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে। নাগরিকরাও এতে অভস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে বেশ কিছু বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। কিউকমও করোনাকালীন তাদের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে কিউকমের অনেক ক্রেতাই অর্ডার করে পণ্য না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিপন মিয়া জানিয়েছেন, কিউকম প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করে পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করছিলেন। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং করার জন্য তারা ব্যাপকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি করে। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে কিউকম লোভনীয় দামে মোটরসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলো। বাজার যেই মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, সেটি তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতো। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা অর্ডার করে মোটরসাইকেল না পেয়ে হতাশায় ভোগেন। এক্ষেত্রে রিপন আরও জানান, তিনি মোটরসাইকেল ডেলিভারি না দিয়ে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চেক দিতেন গ্রাহকদের।
তিনি বলেন, কিউকম প্রায় লক্ষাধিক পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে। ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে কিউকম বিজয় আওয়ার, স্বাধীনতা আওয়া এবং বিগ বিলিয়ন নামে ২ থেকে ১৫ দিন সময় দিয়ে অনেক কম দামে মোটরসাইকেল অফার করতো। অফার পেয়ে ক্রেতারা নগদ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে মোটরসাইকেল অর্ডার করতো। কিন্তু সময়মত কিউকম পণ্য সরবরাহ না করায় সকল ক্রেতা হতাশ হয়ে কিউকমে যোগাযোগ করে। কিউকম লাভে টাকা ফেরত নেওয়ার অফার করলে ক্রেতারা লোভে পড়ে লাভের অংশ থেকে ১০-২০শতাংশ কমে কিউকম থেকে টাকার চেক গ্রহণ করে।
হাফিজ আক্তার বলেন, বর্তমানে আমরা জানি যে, বাংলাদেশ ব্যাংক জুন মাস থেকে এস্ক্রো সিস্টেম চালু করে। এর অধীনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু করে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ফোস্টার নামক একটি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের পেমেন্টটি ফোস্টারের কাছে থাকবে, পণ্য ডেলিভারি পর পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে ফোস্টার। কিউকমের পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি ফোস্টারের নজরে আসে। পরে ফোস্টার ক্রেতা পণ্য বুঝে না পেলে ফোস্টার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রুফ অব ডেলিভারির নির্দেশনা অনুযায়ী কিউকমের টাকা আটকে দেয়। যার ফলে ক্রেতা পণ্য কিংবা টাকা কোনটি পায়না। ফোস্টার এখন পর্যন্ত কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা মোটরসাইকেলের পেমেন্ট আটকে দিয়েছে বলে রিপন মিয়া আমাদের কাছে দাবি করেন। এছাড়া তার কাছে গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আটকে আছে।
রিপন মিয়ার ব্যাংকে কত টাকা আছে এবং গ্রাহকদের এটা কীভাবে তিনি ফেরত দেবেন? -এ বিষয়ে রিপন মিয়া কিছু জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে সাংবাদিকদের ডিবি কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে তিনি আমাদের কাছে বলেছেন, গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিয়ে এ সমস্যা থেকে বের হতে পারবেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের মূল্যছাড় দিয়ে এ কাজগুলো করছে। অর্থাৎ এগ্রেসিভ মার্কেটিং পলিসি নিয়ে তারা প্রতারণার কাজগুলো করছে। জনগণের স্বার্থে আমরা ই-কমার্স সাইটগুলোকে ধরছি। হাতেগোনা ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করছে, আমরা তাদের ধরছি। আমরা আশা করছি যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ই-কমার্সের সুফল পাবে নাগরিকরা। তবে মামলা হলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি, এছাড়া নয়।
কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা ফোস্টারের কাছে আছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু এটা শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের টাকা। মোটরসাইকেলের ডেলিভারি যারা দিয়েছেন তাদের টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অন্য কোনো এমএলএম কোম্পানির সঙ্গে রিপন মিয়ার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানাতে পারব।
কিউকমের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ঠিক কি অভিযোগ করছেন জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল অর্ডার করে পেমেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু তিনি মোটরসাইকেলের ডেলিভারি পাননি। রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর প্রচুর সংখ্যক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছেন। রিপন এখন মালামাল না দিয়ে চেক দেওয়া শুরু করেছেন। এছাড়া চেক দিয়ে তিনি গ্রাহকদের যে কমিটমেন্টের দিয়েছিলেন, সেটার বরখেলাপ করছেন।
চেক যাদের দিয়েছে তারা কি টাকা হাতে পেয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু লোক টাকা তুলতে পেরেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
ই-কমার্স প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা ছাড়াও অন্য প্রতারকদের বিষয়ে ডিবির পদক্ষেপের বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, প্রতারণা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেবো। সম্প্রতি দেখা গেছে, অনেকে অনলাইনে টাকা ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব। সম্পাদনা : ভিকটর রোজারিও