দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে, আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি : প্রধানমন্ত্রী
অর্থনীতি ডেস্ক : দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত। আমরা ১০ একর জায়গা নিয়ে রেখেছি। গাভি (বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট) আছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা বলেছি, আমরা ফর্মুলা চাই। আমরা ফর্মুলা পেলে দেশেই ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে পারব।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে তিনি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। তাদেরও আগ্রহ আছে। ফলে আমরা ভ্যাকসিন উৎপাদনের বিষয়ে আশাবাদী। আমরা নিজেরাই ভ্যাকসিন তৈরি করব।
সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আমাদের অর্থনীতির এডিটর ইন চার্জ মাসুদা ভাট্টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, আফগানিস্তান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ওপর কোনো জঙ্গিবাদের প্রভাব পড়বে কি না? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক। আফগানিস্তানে ঐ ঘটনার কোনো রকম বাতাস যেন আমাদের দেশে না আসে সেদিকে সাংবাদিকদের নজর রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তালেবান নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাধারণ মানুষ সচেতন আছে। কলামিস্টসহ টকশোতে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের তিনি ভূমিকা পালনের তাগিদ দেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করলেও আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো একটি দেশে শরণার্থী থাকলে বরং অনেক সংস্থার জন্যই উপার্জনের পথ তৈরি হয় বলেও সেসব সংস্থার প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দেশে শরণার্থী (রিফিউজি) থাকলে সেটাই বোধহয় কারও কারও জন্য ব্যবসা হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তরিক। তবে কোনো কোনো সংস্থার জন্য এটি ব্যবসা। শরণার্থী না থাকলে তো তাদের চাকরিই থাকবে না।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি হয়ে শুক্রবার রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়েই মতবিনিময় করতেই এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
রোহিঙ্গা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রিফিউজি থাকলে কারও কারও জন্য কিছুটা লাভই হয়। তারা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি খুব একটা দেখে না। অনেকের কাছ থেকেই অনেক প্রস্তাবনা পাই— এদের জন্য এটা করা হোক, ওটা করা হোক। আমরা বলি— যা কিছু করার, মিয়ানমারে করেন। সেখানে করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যান। এখানে তাদের (রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী) জন্য যা কিছু করার, আমরা করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গারা যখন এলো প্রথম কয়েক মাস তো তাদের জন্য সবকিছু আমরাই করলাম। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরে যুক্ত হয়েছে। আমাদের কাছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যখনই কোনো কিছু করার কথা বলে, আমরা বলি যা করার মিয়ানমারে করেন। সেখানে হাসপাতাল করেন, স্কুল করেন, ঘরে করে দেন। আমাদের এখানে যা করার আমরা করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা- কিছু কিছু শ্রেণির কাছে সবকিছুকেই ব্যবসা মনে হয়। তবে কেউ কেউ তো আন্তরিকও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাই। কিন্তু কেউ কেউ শুধু শুনেই যান, সমস্যা এখানেই।
ডিজিটাল বাংলাদেশে ভার্চুয়াল কনফারেন্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও সুন্দর বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমরা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কনফারেন্স করতে শুরু করেছিলাম। এখানে চমৎকার সিস্টেম রয়েছে। এর মধ্যে আমি আমেরিকায় গিয়েও ডিজিটাল মাধ্যমে কনফারেন্স করলাম। সেখান থেকেও তো আমাদের এখানে সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের ব্যঙ্গ করা হলো। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ কি বাস্তবায়ন হয়নি? আমরা তো সবকিছুই ডিজিটাল মাধ্যমে করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা সংক্রমণের সময় যখন সবকিছু বন্ধ, তখন তো ভার্চুয়াল মাধ্যমেই সবকিছু করেছি। প্রতিটি জেলায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।
চলমান সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনাদেরও তো এখন কষ্ট নেই। এখনই মেসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছেন, নিউজ হয়ে যাচ্ছে। কথা বলে রেকর্ড করে নিচ্ছেন, কারেকশন করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
এ সময় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত পরিচালনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যখন দেখলাম, করোনার কারণে বিচারকাজ থেমে আছে তখন আমরা ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করলাম। প্রধান বিচারপতিকে প্রস্তাব দিলাম, ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা করুন। এখন একে আরও পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়) কাজ করছেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ কাজে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমরা নিজেদের টাকাতেই এটি করব। এটি নিয়ে কাজ চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় যে মহামারি দেখা দিলে একটি শ্রেণি আর্থিক লাভ-লোকসানের দিকে যতটা তাকায়, মানুষের দিকে ততটা তাকায় না। কেবল আমাদের দেশেই না, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ ধরনের গোষ্ঠী রয়েছে। এ কারণেই আমি ভ্যাকসিনকে সার্বজনীন একটি পণ্যে পরিণত করার পক্ষে কথা বলেছি যেন এই ভ্যাকসিন সবাই পায়।
তিনি বলেন, এখনও কিন্তু অনেক দেশ আছে যারা ভ্যাকসিন পায়নি। অনেক দেশ এক ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পায়নি। এ সব দেশের কথা আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলেছি। আমি বলেছি, সবার জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়হীনদের জন্য সরকার যে ঘর উপহার দিয়েছে, সে সবের কিছু ধসে পড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পেয়েছি। এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তবে দেড় লাখ ঘর দেওয়া হলো। এগুলোর সবগুলোই কি ভেঙে পড়েছে নাকি কেউ ভেঙেছে?
সরকারপ্রধান বলেন, দেড় লাখ ঘর (উপহার) দেওয়া হলো। এগুলোর সবগুলোই কি ভেঙে পড়েছে নাকি কেউ ভেঙেছে। আমরা নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছি। কিন্তু বাকিগুলোতে কোনো দুর্নীতি ছিল না।
প্রোজেক্টরে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ঘরের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, এগুলো হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙেছে। আপনারা বিষয়টি একটু ভালো করে দেখেন, খোঁজ নেন। আপনারা এটা খুঁজে বের করলেন না, কারা এটা ভাঙলো। করোনাকালে ঘরগুলো তৈরির ফলে এতো মানুষের কাজের সুযোগ হলো, সেটাও দেখলেন না। আমি কি জানতে পারি কেন আপনারা এটা দেখেননি?
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ৩০০টা ঘর কিছু মানুষ নিজে থেকে গিয়ে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙে তারপরে মিডিয়ায় সেগুলোর ছবি তুলে ফেলছে। যারা ভেঙেছে, তদন্তে তাদের সবার নাম বের করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্থায়ী বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। তার নিচে একটি বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘ সদর দফতরে কোনও রাজনৈতিক নেতার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বিরল সম্মান। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমরা আলোচনা করি, বৃক্ষরোপণ আমাদেরও লক্ষ্য। বাংলাদেশে আমরা সেটি করে যাচ্ছি। জাতিসংঘ সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করতে পারা সত্যেই আমার জন্য আনন্দের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যে অবিচলভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে, এই পুরস্কার তারই বিশ্ব স্বীকৃতি। আমি দেশের জনগণকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করি।