বাজার অব্যস্থাবপনায় বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম
মো. আখতারুজ্জামান : ভারতে থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার খবরের পরে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়তে থাকে। বর্তমানে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। আগে ক্রয় করা মূল্যের পেঁয়াজ কিভাবে হঠাৎ করে প্রতিকেজিতে ২৫ টাকা বাড়তে পারে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, সরকারের বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ বারবার নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে যা বেড়েছে ১৬ টাকা। গত সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৬-৩৭ টাকায়। আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। আর মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়।
ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়। খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজ তেমন নেই। তবে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ একই দামে বিক্রি হচ্ছে এখানে। সোমবার বিকেল থেকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ঐ দিন সকালে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকায়। আর এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা দরে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জানান, মিয়ানমারে বন্যা থাকায় বেশ কিছু দিন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিলো। ইন্ডিয়াও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে খাতুনগঞ্জসহ সারা দেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ থেকে ১৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আশার দিক হচ্ছে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আবার আসতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে খালাশের অপেক্ষায় আছে। অন্যদিকে পাকিস্তা ও মিশরেও এসলি করা হয়েছে। আমরা আশা করছি কয়েক ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমে আসবে।
তবে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর এই অজুহাত মানতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ লাখ টন। এরমধ্যে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ৩৩ লাখ টন। সংরক্ষণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বাকি থাকে ২৩ লাখ টন। আর প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ সবসময় উদ্বৃত্ত থাকে। তাই হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একদিন আগে রবিবার এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা ও ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। আর এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায়।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজির হোসেন বলেন, ব্যবসায়ী ও আমদানির কারসাজির কারণেই পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। পেঁয়াজের দাম বাড়বে কারণ এটা তো আউট অব কন্ট্রোল। এছাড়া খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের ব্যবসা পেপারলেস কমিশন এজেন্ট আর আড়তদার মিলেই খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়ায়। যখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিংয়ে যায় তখন ব্যবসায়ীরা কোনো কাগজ দেখাতে পারে না। খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের ব্যবসাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। না হলে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটবে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।