আমিরুল ইসলাম : এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, সাধারণত একটি অর্থনীতি বেশ কিছুদিন স্থিমিত থাকার পর যখন পুনর্বাসনের উদ্যোগ আসে তখনই একটি পক্ষ সিন্ডিকেশন বা ষড়যন্ত্রে যায় বা এর সুযোগটা নেয়। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সব জায়গায়, সবখাতে, সবক্ষেত্রেই। কারণ আগে মানুষের একধরনের অবস্থা ছিলো। এখন হঠাৎ করে মানুষ বাজারে আসছে, চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। চাহিদা বেড়ে গেলেই তখন কৃত্রিম সংকট তৈরি করার একটি পদক্ষেপ নেয় এই সিন্ডিকেটরা।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময় চারটা বিপদ দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে সাবধানে থাকতে হয়। [১] ছিনতাই, রাহাজানি বেড়ে যাবে। কারণ একটা পক্ষ চুপ মেরে বসেছিলো। অনেকদিন তাদের কাজকর্ম করতে পারেনি, এখন করবে। [২] দ্রব্যমূল্যের ওপর হঠাৎ করে একটি প্রেসার তৈরি হবে। কারণ সবাই এলসি খোলা শুরু করবে। কোথা থেকে আসছে, কার কাছে যাচ্ছেÑ এখানে একটি হযবরল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসময় যদি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ যতো রেগুলেটর আছে তারা যদি নিষ্ক্রিয় থাকে এবং যথাযথভাবে ব্যবস্থা না নেয়, আগে থেকে সতর্ক না হয় তাহলে হযবরল পরিস্থিতিটাই সিন্ডিকেটের পক্ষে চলে যায়। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলা হচ্ছে। কিন্তু কোন বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে সেটা কেউ বলে না। এর ফলে অর্থনীতিতে একটি টুইস্ট তৈরি হয়।
[৩] দেশে চাল আমদানি হচ্ছে, আমাদের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। সেখানে কেন চালের দাম বাড়ছে। অতিদ্রুত খোঁজ নিতে হবে যে কেন এটা হচ্ছে? কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কিনা? কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বেশি চাচ্ছে কিনা? এই বিষয়ে রেগুলেটরদের সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে। যেমন: ডলারের দাম এতো দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে কেন? সেটাও দেখা দরকার। [৪] অর্থনীতি অনেকদিন অচল থাকার পর যখন সচল হয় তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সেটার ধাক্কা সামলাতে গিয়ে আবার কষ্ট হয়। যেমন: ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। চালের দামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বছর দুই আগে শুধু পেঁয়াজ নিয়েই আমাদের অনেক নিউজ করতে হয়েছিলো, লাল রঙের হেডিং করতে হয়েছিলো। পেঁয়াজ নিজেই মনে করছিলো যে সে যদি নির্বাচনে দাঁড়ায় তাহলে জিতে যাবে ভবিষ্যতে! কখনো কখনো সিম্পল একটা কাঁচামরিচও আমাদের বাজারে নায়ক হয়ে যায়। এই বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে। অর্থাৎ অচল অর্থনীতি সচল হওয়ার সময় যে ধাক্কা খায় সেখানে যদি রেগুলেটররা তাদের দায়িত্ব পালন না করলে রোগী মারা যাওয়ার পর ডাক্তার আসার মতো অবস্থা হয়। দেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে তারপরও কেন দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না? কোথা থেকে সাপ্লাই হচ্ছে, দামটা কে বাড়াচ্ছে? যারা দাম বাড়াচ্ছে তাদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। বিদ্যমান আইন যার রয়েছে তার প্রয়োগ করে যদি নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় তাহলে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে লাগাম টানা যাবে।