‘পোশাক খাতে সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পরিবহন খরচ’
আমিরুল ইসলাম : করোনা মাহামারির কারণে পরিবর্তিত বৈশি^ক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের তৈরি পোশকাশিল্পের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী জানতে চাইলে বাংলাদেশে ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বৈশি^ক পরিবর্তিত অর্থনীতি খাপ খাওয়ায় নতুন পরিকল্পনা নিয়ে উদ্যোক্তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন এবং যা যা করার করছেন। এখন সবচেয়ে বেশি দরকার কর্মসংস্থান ধরে রাখা। বিশেষ করে নারী কর্মীদের নতুন পৃথিবীতে তাদের ধরে রাখা। তাদের ধরে রাখতে হলে প্রশিক্ষণ দেওয়া, প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের খাপ খাওয়ানো এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করা প্রয়োজন। সরকার ও উদ্যোক্তাদের এসব করে দিতে হবে। এগুলো যে করা হচ্ছে না, এমনটা বলা যাবে না। কারণ অনেক উদ্যোক্তা এখন সবুজ ফ্যাক্টরির দিকে যাচ্ছে। বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের বাজারজাতের কৌশল ঠিক করছেন। এগুলো যেন তারা চালিয়ে যায় সেজন্য সরকারকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে।
মহামারির সময় আমাদের সরকার যথেষ্ট উদারতা দেখিয়েছে গার্মেন্টস সেক্টরের প্রতি। গার্মেন্টসের উদ্যোক্তারা ও কর্মীরা সকলেই সরকারের প্রণোদনা, সমর্থন পেয়েছে। সরকারের নীতি সমর্থন তারা পাবেন। কিন্তু নিজেদের কাজগুলো তাদের করে ফেলতে হবে। প্রত্যেকটি ফ্যাক্টরিকে বিশ^মানের রাখতে হবে। তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। বিশেষ করে নারী কর্মীদের যাতে তারা ধরে রাখতে পারেন তার জন্য যে সমস্ত ব্যবস্থা করা দরকার সেগুলো করতে হবে। এগুলো করতে পারলে নতুন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারবে। সারা পৃথিবীর বাজার ঘুরছে, সেটার সুযোগ বাংলাদেশে নিতে পারবে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নীট বেয়ারে খুব ভালো করছে, রেভিনিউ খারাপ নয়। বিভিন্ন দেশে যখন মার্কেট খুলছে তখন বাংলাদেশে ইতোমধ্যে অর্ডার পাওয়া শুরু করেছে। চীন থেকে অনেক অর্ডার বাংলাদেশে এসেছে। এমনকি ভিয়েতনামে লকডাউন হওয়ার কারণে ভিয়েতনামের কিছু অর্ডারও বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের সুবিধা হচ্ছে গার্মেন্টসের সংখ্যা অনেক বেশি। করোনার সময়ও সরকারের প্রণোদনার কারণে এবং নীতি ও মনোযোগের কারণে গার্মেন্টসগুলো চালু ছিলো। চালু থাকার কারণে পৃথিবীর সঙ্গে তাদের মার্কেটিং নষ্ট হয়নি। ছোট ছোট উদ্যোক্তারা কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু বড়রা মার্কেটকে অক্ষুণœ রেখেছেন। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খরচ। জাহাজের খরচ, বিমানের খরচ এমনকি দেশের ভেতরের পরিবহন খরচও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। সেজন্য গার্মেন্টেসের পার ইউনিট লাভ বেশ কমে গেছে। সেজন্য সরকারকে এখনই যে সমস্ত সুবিধা গার্মেন্টস খাতকে করোনার সময় দিয়েছে সেগুলো ইমিডিয়েটলি প্রত্যাহার করা ঠিক হবে না। আস্তে আস্তে প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ এটা আমাদের লাইফগার্ড বা আমাদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তাই এর দিকে নজরটা রাখতে হবে। সরকারকে রাখতে হবে, উদ্যোক্তাদেরও কর্মীদের দিকে নজর রাখতে হবে।
স্মার্ট মার্কেটিং করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কেমন হবে ব্যবসা-বাণিজ্য সেদিকে নজর রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেগোসিয়েশন খুব স্মার্টলি হ্যান্ডেল করতে হবে। স্মার্ট নেগোসিয়েশন চালু করতে হবে।
আমাদের জাহাজ পরিবহনে বিদেশি জাহাজের ওপর এতো নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের নিজেদের জাহাজগুলো ঠিক করে আরও বেশি উৎসাহ দেওয়া যায়। তাদের জন্য প্রয়োজন হলে নীতিমালা করা ও প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে। আমাদের নিজস্ব জাহাজের একটি নেটওয়ার্ক থাকতে হবে। সবসময় বিদেশিদের ওপর নির্ভর করলে তারা দাম বাড়িয়ে দেয়।
আমাদের নিজস্ব জাহাজ দরকার হলে প্রক্রিউর করতে হবে। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর অনেকটা উন্নতি করেছে। সেখানে যেন কোনো রকমের বাধা না আসে। ঘন ঘন স্ট্রাইক এবং বিশেষ মহলের হস্তক্ষেপ যেন বন্ধ থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর যে সাফল্য অর্জন করেছে সেটা যেন অব্যাহত থাকে। পরিবহনে যেন কোনো বাধা না আসে। নির্বিঘেœ যেন পণ্যগুলো যেতে পারে। স্পেশাল ইকোনোমিক জোনগুলো, অন্তত মিরেরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু পার্ক তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করে এর সঙ্গে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজগুলো চালু রেখে নতুন পৃথিবীর সঙ্গে কাজ যেন করতে পারি এমন নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো অন্য বন্দরগুলোরও উন্নতি করা উচিত। রাস্তাঘাটে যেন কোনো রকম চাঁদাবাজি ও বাধা না আসে সেদিকে নজর রাখতে হবে।