ভোগ্যপণ্য, বাজারজাতকরণ এবং বাজারে অবস্থান গ্রহণ
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
উদ্যোক্তাদের একটি বাজার অংশকে টার্গেট করে বাজারে নামতে উপদেশ দেওয়া হয়। বাজারের যে অংশটিকেই নির্দিষ্ট করা হোক না কেন সেখানে গিয়ে একটা পজিশন দখল করতে হবে। বাজারজাতকরণ সাহিত্যে ‘প্লেস’ (ঢ়ষধপব) এবং ‘পজিশন’ (ঢ়ড়ংরঃরড়হ) সম্পূর্ণ আলাদা শব্দ। যদিও অভিধানে দুই শব্দের অর্থ প্রায় কাছাকাছি। প্লেস শব্দটি আক্ষরিক অর্থেই একটি স্থানকে বোঝায়। পণ্য যতোই মানসম্মত হোক না কেন এটাকে ক্রেতাদের হাতের কাছে রাখতে হবে অর্থাৎ দোকানের সেলফে যদি নির্দিষ্ট পণ্যটি না থাকে তাহলে ক্রেতা হয়তো যেটা তার সামনে পড়বে সেটাই কিনে নেবে। বিশেষ করে নৈমিত্তিক ভোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে এটা হওয়াই স্বাভাবিক। সেজন্য দোকানদারের সেলফের মধ্যে একটা জায়গা করে নিতে হবে। এমনকি দোকানের সেলফে বা তাকে পণ্যটি কোথায় রাখা হলো, ওপরের দিকে, না নিচের দিকে, সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত দেখা গেছে চক্ষুর সমান্তরালে যে সকল পণ্য থাকে ক্রেতারা সেগুলোর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। অতএব, দোকানের সেলফে একটু জায়গা পেতেই হবে। এটাকে মূলত মার্কেটিংয়ে ‘প্লেস’ বলা হয়। যদিও এর সঙ্গে গুদামজাতকরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ, ইনভেন্টরি, ডেলিভারি ইত্যাদি কর্মগুলো জড়িত। ‘পজিশন’ শব্দটির অর্থ একটি স্থান বা জায়গা হলেও সেটা দোকানের সেলফের মধ্যে নয় বরং এই জায়গা হচ্ছে মানুষের মনের মধ্যে। মানুষের মনের মধ্যে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টাকে মার্কেটিংয়ে ‘পজিশনিং’ বলা হয়। আমার জানা এক ভদ্রলোক গত প্রায় চল্লিশ বছর যাবত বাটার জুতা কিনে, আর অন্য কোনো জুতা কিনেন না। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি গত ৪০ বছর যাবত টানা বাটার জুতা কিনে যাচ্ছেন এর কারণটা কী? ডিজাইন কী খুব ভালো? দামে সস্তা? তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকদিন টিকে, একবার কিনলে কয়েক বছর ঝামেলা করে না’। এই স্থায়িত্ব বা টেকসয়ৎ এটাই হচ্ছে ক্রেতার মনে বাটার পজিশন।
মার্কেটিংয়ে দুটো কাজই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দোকানে জায়গা পাওয়া বেশ কষ্টকর। যারা নতুন কোম্পানিতে চাকরি করেন তারা তা ভালোভাবেই জানেন অভিজাত দোকানে পণ্য ওঠাতে গিয়ে কতোটা বেগ পেতে হয়। ছোটোখাটো কোম্পানিকে বড় বড় দোকানিরা একেবারে পাত্তাই দিতে চায় না। কারণ তাদের দোকানের ভাড়া প্রতি স্কয়ার ইঞ্চি হিসাব করে পরিশোধ করতে হয়। যার কারণে তারা তাদের দোকানের জায়গা সর্বোচ্চ লাভজনক ব্যবহার করতে চায়। যার কারণে বেশিরভাগ সময়ই দোকানিরা তাকিয়ে থাকে জাতীয় ও বহুজাতিক বড় বড় কোম্পানির বিক্রয়কর্মী এবং তাদের সরবরাহ ভ্যানের দিকে। ছোট এবং নতুন কোম্পানির বিক্রয় কর্মীদের অনেক কষ্ট করে বড় দোকানে জায়গা করে নিতে হয়। কখনো কখনো কোম্পানি থেকেও তাদের দোকানের নাম ধরে, যেমনÑআগরা, মিনা বাজার, আলমাস, ইউনিমার্ট এই সকল দোকানে তাদের কোম্পানির পণ্য ওঠানোর টার্গেট দিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় এক মাসের মধ্যে অন্তত এই দুইটি অভিজাত দোকানের সেলফে কোম্পানির ‘রান্ধবী’ গুঁড়া মসলা রাখা চাই। (প্রস্তাবিত ‘রান্ধবী’ শব্দটি বান্ধবীর মতো শোনালেও এর কোনো অর্থ নেই। বাংলা ভাষায় এ ধরনের কোনো শব্দও নেই, যেমনটি কড়ফধশ, ঊীীড়হ এই শব্দগুলোরও কোনো অর্থ নেই)। বিক্রয় কর্মী বহু চেষ্টা করে ডিসপ্লে ম্যানেজারের সঙ্গে অনুনয় বিনয় করে কখনো কখনো জায়গা করে নিতে পারে কিন্তু ডিসপ্লে ম্যানেজারের ওপরে যে স্টোর ম্যানেজার থাকে সে সেটা সহজভাবে নেয় না। ধরা যাক নতুন প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানি তার উৎপাদিত ‘রান্ধবী’ গুঁড়া মসলার জন্য একটি অত্যন্ত নামিদামি দোকানের সেলফে একটু জায়গা পেলো। আর এই জায়গাটি যাতে অন্য কোম্পানি দখল করতে না পারে সেখানে পাথরের সেলফের মধ্যে তার কোম্পানির নাম লিখে আসলো। ‘দিস প্লেস ইজ রিজার্ভড ফর রান্ধবী’ গুঁড়া মসলা। লেখার ওপরে কয়েক প্যাকেট গুঁড়া মসলা রেখে আসলো। তিনদিন পরে আবার সেখানে দেখতে গেলো। গিয়ে দেখে তার মসলাও নেই, লেখাও নেই। কারণ ডিসপ্লে ম্যানেজার ‘রান্ধবী’ রাখলেও স্টোর ম্যানেজার এসে সেগুলোকে বস্তায় ভরে বেজমেন্টে পাঠিয়ে দেয় এবং সেখানে রাঁধুনী, প্রাণ, ফ্রেশÑ এ সকল ব্র্যান্ডের গুঁড়া মসলা রেখে দিয়েছে। পাথরে লেখা রান্ধবীর নাম মুছে ফেলেছে। যার কারণে আমি বিক্রয়কর্মীদের মান্না দে’র বিখ্যাত গানটি স্মরণ করতে বলি, ‘…পাথরে লেখো নাম,পাথর ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে’। হৃদয়ে নাম লেখার কাজটাই হচ্ছে পজিশনিং। যদি কারো হৃদয়ে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া যায় তাহলে সেই ক্রেতা দোকানে এসে সেলফের মধ্যে রান্ধবী না পেলেও বিক্রয় কর্মীদের বলবে আমাকে রান্ধবী দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। দোকানদার অন্যান্য মসলা দেখালেও সে বলবে, ‘আমার রান্ধবীকেই চাই, প্রথমত, দ্বিতীয়ত এবং শেষ পর্যন্ত’। তখন দোকানের বিক্রয়কর্মীরা বেজমেন্টে গিয়ে রান্ধবীকে এনে ক্রেতার হাতে দেবে। অতএব, হৃদয়ে স্থান পাওয়া গেলে দোকানদারের সেলফে স্থান না পেলেও চলবে। বেজমেন্টে থাকলেও পণ্য বিক্রি হবে। অর্থাৎ পজিশন থাকলে প্লেস পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক উপাচার্যকে দেখেছি উপাচার্যের পজিশন পাওয়ার পর কোনো সভা সমিতিতে বিলম্বে গিয়েও বসার স্থান পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি। সামনের সারিতে স্থান (ঢ়ষধপব) পেয়ে যেতেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রেতার হৃদয়ে স্থান পাওয়ার উপায়টা কী? সোজা কথা হচ্ছে ক্রেতার মনে দাগ কাটতে হবে। একটাই বুদ্ধি সেটা হচ্ছে ভিন্ন কিছু করা, যেটা আমরা গত ইস্যুতে (সংকটে মার্কেটিং-৯) আলোচনা করেছিলাম। সেখানে পণ্যটা ভিন্ন রকমের হতে পারে (ঢ়ৎড়ফঁপঃ ফরভভবৎবহঃরধঃরড়হ)। পণ্যের রং, ডিজাইন, গুণাবলী, আকৃতি, মান ইত্যাদি প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা হবে। দ্বিতীয় পৃথকীকরণের হাতিয়ারটি হচ্ছে সেবা (ংবৎারপব ফরভভবৎবহঃরধঃরড়হ)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পণ্যে ভিন্নতা আনা ব্যয়বহুল এবং কঠিন কাজ। ধরা যাক, একজন উদ্যোক্তা ঢাকা- কক্সবাজারের মধ্যে একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস চালু করতে চাচ্ছে। এক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের মধ্যে ভিন্নতা আনা মোটেই সম্ভব নয়। কারণ ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যে এয়ারকন্ডিশনড বাসগুলো চলাচল করে এগুলো ‘হিনো’ অথবা ‘ভলভো’ কোম্পানির তৈরি। কোনো বাস পরিচালনা কোম্পানি গাড়ি তৈরি করে না। অতএব, গাড়িতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা কোনোভাবেই বাস কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়। হয়তো ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন অথবা বাহ্যিক রঙে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যা এয়ারকন্ডিশনড বাসে ভ্রমণকারীদের নিকট ততোটা গুরুত্ব পাবে না। তাছাড়া সবার জন্য ঢাকা-কক্সবাজারের রাস্তার দূরত্ব সমান এবং একই রাস্তায় যেতে হয়। তখনই সেবার ব্যাপারটি চলে আসবে। যেমন কোনো একটা বাস কোম্পানি তাদের পুরো টিকেট পদ্ধতিটা অনলাইন করতে পারে, যাতে টিকেট কেনার জন্য যাত্রীদের কাউন্টারে আসতে না হয় অথবা যাত্রীদের অতিরিক্ত বিনোদনের জন্য গাড়িতে পৃথক পৃথক মিউজিক শোনার এবং সিনেমা দেখার ব্যবস্থা করে দিতে পারে, যেটা উড়োজাহাজে করা হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নতুন যে সেবাই বাস সার্ভিসের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো একই সেবা যুক্ত করে পৃথকীকরণের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবে। পৃথকীকরণের তৃতীয় উপায়টি হচ্ছে বণ্টন প্রণালীতে নতুনত্ব নিয়ে আসা (পযধহহবষ ফরভভবৎবহঃরধঃরড়হ)। যেমন ঢাকা শহরে অনেককেই প্রতিদিন বাসি পাউরুটি খেতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাউরুটিগুলো আগের দিন তৈরি করা হয়, যেগুলো আমরা পরের দিন সকালে নাস্তা হিসেবে খাই। এই ব্যাপারে পৃথকীকরণ করা যেতে পারে। কোনো একটি কোম্পানি ঘোষণা করতে পারে আমরা ভোররাতে পাউরুটি বানাই এবং প্যাকেট করি, ভোর পাঁচটার মধ্যে পাউরুটি হকারদের হাতে চলে যায় এবং সকাল সাতটার মধ্যে প্রত্যেকের বাসায় বাসায় গরম পাউরুটি পৌঁছানো হয়। দৈনিক পত্রিকা ভোরবেলায় প্রত্যেকের বাসায় পৌঁছানো গেলে পাউরুটি পৌঁছে দিতে অসুবিধা কোথায়? চতুর্থ পৃথকীকরণের হাতিয়ারটি হচ্ছে ব্যক্তিক পৃথকীকরণ (ঢ়বৎংড়হহবষ ফরভভবৎবহঃরধঃরড়হ)। যেমন একটি বাস কোম্পানি ঘোষণা করতে পারে অন্যান্য বাসে যারা আপনার সহযোগিতার জন্য থাকবে তারা হচ্ছে বাসের ‘হেলপার’, আর আমাদের বাসে যারা আপনাদের সঙ্গ দেবে তারা ‘কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার’, এমবিএ ডিগ্রিধারী। তারা অত্যন্ত প্রো-অ্যাকটিভ হবে। বাংলাদেশ বিমান আর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মধ্যে উড়োজাহাজের বিবেচনায় আমাদের নতুন ‘ড্রিমলাইনার’ উড়োজাহাজগুলো সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের চেয়ে উন্নত, কিন্তু সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ব্যক্তিক (ঢ়বৎংড়হহবষ) সেবা অতুলনীয়। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সার্ভিস প্রদানকারীরা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা যাত্রীদের সেবায় হয় প্রো-অ্যাকটিভ। আর আমাদের বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লোকদের ডেকেও কাছে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসার সময় যাত্রীদের (যাদের উপার্জনের টাকায় বছরের পর বছর লোকসানী সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়) সঙ্গে যে ধরনের অসম্মানজনক ব্যবহার করে তা আমি নিজেই একবার দুবাই থেকে আসার সময় প্রত্যক্ষ করেছি। পৃথকীকরণের সর্বশেষ উপায়টি হচ্ছে ইমেজ তৈরি করা (রসধমব ফরভভবৎবহঃরধঃরড়হ)। কোম্পানির ইমেজ ভালো হলে সেটা গিয়ে পণ্যের ইমেজের ওপর পড়ে। বাজারে অনেক কোম্পানি আছে যারা দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে ইমেজ তৈরি করেছে। নতুন কোম্পানির পক্ষে রাতারাতি ওই ধরনের ইমেজ তৈরি করা কঠিন কাজ। সেজন্য তাদের বিভিন্ন গণসংযোগ, প্রচারণা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোম্পানির অনুকূল ইমেজ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে কমিউনিটি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোম্পানিকে একটি ভালো কর্পোরেট সিটিজেনের ভাবমূর্তি তৈরি করতে হবে। তাহলেই কেবল প্রতিষ্ঠিত পুরনো ঐতিহ্যবাহী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পৃথক একটি অবস্থান নেওয়া যাবে। অবস্থান গ্রহণের সবচেয়ে ভালো সুপারিশ করেছেন অষ জরবং এবং ঔধপশ ঞৎড়ঁঃ। তারা তিনটি কৌশলের কথা সুপারিশ করেছেন। এর প্রথমটি হচ্ছে কোম্পানির মূল শক্তিটিকে মানুষের সামনে উদ্ভাসিত করা এবং সেটাকেই আরও শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া। গাড়ি ভাড়ার জগতের রানারআপ কোম্পানি আরং যেমনটি করেছিলো। তারা বলেছিলো, ‘ডব ধৎব ড়হষু হঁসনবৎ # ২ , ংড় বি ঃৎু যধৎফবৎ’। কোম্পানিটি বিশ্ববাজারে তাদের দ্বিতীয় অবস্থানটাকে তাদের শক্তি হিসেবে ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরে। যেহেতু তাদের অবস্থান দ্বিতীয় অতএব, তারা কঠোর পরিশ্রম করছে প্রথম হওয়ার জন্য, এমন একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতের মধ্যে আছে। ধরা যাক, একজন পাউরুটি বিক্রেতা ঢাকার বনশ্রী এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠলো। এই পাউরুটি বিক্রেতার প্রথম কাজ হচ্ছে কেন বনশ্রী এলাকার মানুষ তার কনফেকশনারির পাউরুটি পছন্দ করে তা অনুসন্ধান করে জেনে নেওয়া। সে জেনেও গেলো, তার পাউরুটি অনেক ‘সফট’, তাই এলাকার মধ্যে তার অবস্থান প্রথম। অতএব, এই পাউরুটি বিক্রেতার কাজ হবে সম্ভব হলে পাউরুটি আরো সফট করা এবং এই পাউরুটির সফটনেসের ব্যাপারটি জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যে প্রথম হবে (বাংলাদেশ তোমাকে খুঁজছে!) তার কাজ হচ্ছে কেন দর্শকরা তাকে এসএমএস এর মাধ্যমে এতো বেশি ভোট দিলো তা জানার চেষ্টা করা। সে জেনেও গেলো, তার চুলগুলো অনেক লম্বা ও সুন্দর এই জন্য তাকে সবাই বেশি ভোট দিয়েছে। অতঃপর এই সুন্দরীর কাজ হচ্ছে তার চুল আরো লম্বা করা এবং বিভিন্নভাবে চুল প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। সে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রী হয় তাকে চেষ্টা চালাতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সপ্তাহে ‘ফ্যাশন শো’-এর সঙ্গে একটি ‘লম্বা চুলের প্রতিযোগিতার’ আয়োজন করার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।
দ্বিতীয় কৌশলটি হচ্ছে একটি খালি জায়গা দখল করা। বিক্রেতাকে জরিপ করে বের করতে হবে ভোক্তারা কিনতে চাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না , সেরকম একটি খালি জায়গা বা গ্যাপ পাওয়া গেলে সেখানে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেওয়া। ভিড়ের মধ্যে না গিয়ে আলাদা থাকা গেলে সহজে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। ইদানীংকালে বিয়ে বাড়িতে সহজে কনের উপস্থিতি দেখা যায় না। কোথাও কোথাও বিয়ের খাওয়া দাওয়া শেষ হলেও কনে এসে পৌঁছতে পারে না। কারণ কনে বিউটি পার্লারে আটকা পড়েছে। পার্লারে লম্বা সিরিয়াল থাকায় কনের সাজগোজ বিলম্বিত হচ্ছে। এছাড়া কনের সঙ্গে সঙ্গে তার খালাতো বোন, মামাতো বোন, বিশ্ববিদ্যালয় বান্ধবীরাও মাইক্রো বাস করে সাজতে যায়। যারা সাজতে যায় তাদের বিউটি পার্লারে যাওয়ার অন্তত একদিন আগ থেকেই প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। কচি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া, দুধের সর মাখা, শসা কেটে চোখের ওপর রেখে দেওয়া, কাঁচা হলুদ বাটা লাগানো ইত্যাদি কাজ বাড়িতেই করতে হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় এতো কষ্ট করে সেজেও অনেকেই কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না। কারণ তাদের অনেকে কনের জন্য নির্ধারিত মঞ্চে গিয়ে অবস্থান নেয়। সে বুঝতে পারে না আজকে সবাই কনেকেই দেখছে। তাছাড়া অনেক দামি শাড়ি ও গহনা পরায় কনেকে অন্যদের চেয়ে আকর্ষণীয় দেখানোই স্বাভাবিক। সেজন্য আমার সাজেশন হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কনের মঞ্চ অথবা সুন্দরীদের ভিড়ের মধ্যে না যাওয়া। পারলে সম্পূর্ণ একটি খালি জায়গায় বসে থাকা অথবা দোতালায় চলে যাওয়া, যেখানে কেবল ছেলেদের খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তখন দেখা যাবে পুরো ফ্লোরে একজন মহিলা, আর সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে। দুইদিন যাবত কষ্ট করে সাজাটা কাজে লাগলো। লেখক : শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়