‘মানুষের তৈরি পরিবেশের সমস্যাগুলো সমাধান করা সরকারের একার পক্ষে সহজ নয়’
মো. আখতারুজ্জামান : পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, মানুষের তৈরি সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো সমাধান করা সরকারের একার পক্ষে সহজ নয়। সরকার, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, জনকল্যাণ এবং সামাজিক উদ্যোগের সাথে ব্যবসা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাদের সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ নিতে হবে।
বুধবার রাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) যৌথভাবে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলি রুবায়েত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি। আমাদের অর্থনীতির জন্য প্রভাব বিনিয়োগ খুবই জরুরী, কারণ এটি আর্থিক আয়ের পাশাপাশি ইতিবাচক সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব তৈরি করে। বাংলাদেশ এখন তার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে এ রকম অবস্থানে রয়েছে, যে এটি বিশ্বের প্রভাব বিনিয়োগের কেন্দ্রস্থল হতে পারে।
ভিসিপিয়াব সভাপতি শামীম আহসান বলেন, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে, বিশ্বের অধিকাংশ কোম্পানি অনতিবিলম্বে প্রভাব-ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করবে এবং বিশ্বের জনসংখ্যার বেশিরভাগই প্রভাব-ভিত্তিক কোম্পানিগুলো পণ্য এবং সেবাসমূহ গ্রহণ করবে। এটি কোভিড-১৯ এর মতো মহামারীর ঝুঁকিপূর্ণতা হ্রাস করতে এবং একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতে আমাদেরকে সাহায্য করবে। প্রভাব বিনিয়োগ যেন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, তাই সরকারি বিভাগ এবং সংস্থাগুলো যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচিত হবে এই ইকোসিস্টেমকে অনুকূল নীতিমালা এবং কর প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করা জরুরী।
বিএসইসি কমিশনার প্রফেসর ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যদি আমাদের পৃথিবীকে একটি টেকসই অবস্থানে দেখতে চাই তাহলে বৈশ্বিক প্রভাব বিনিয়োগের চাহিদানুসারে আগামী ২০ বছরের মধ্যে অতিরিক্ত ২০ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। আমাদের সকল পরিকল্পনায় দেশের গ্রামীণ অঞ্চলকে অধিক গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরি। বিএসএসি কমিশনার প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। ১৯৯১ সালের তুলনায় বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির পাঁচগুন অধিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রভাব বিনিয়োগের সুবিধা উপলব্ধি করতে আমাদের একটি প্রাণবন্ত পুঁজিবাজার দরকার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা এখন এমন পর্যায়ে পৌছেছে-যা আর অবহেলা করার সুযোগ নেই। প্রত্যেক দেশকেই বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব কমাতে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই পৃথিবী রেখে যেতে আমাদেরকে খনিজ সম্পদ ব্যবহারে আরো সচেতন হতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে দূষণকারীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগকে পুরস্কৃত করতে হবে।
ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভুইয়া বলেন, গত কয়েক বছরে প্রভাব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশাল প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে অগ্রযাত্রা এবং কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা এবং ফিনটেক খাতের পরিপূর্ণ সম্ভাবনার ফলে বাংলাদেশ প্রভাব বিনিয়োগের জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
আইসিএবি’র সভাপতি মাহমুদুল হাসান খসরু এফসিএ বলেন, আমরা যখনই কোনো পরিকল্পনা করবো সেটির সাথে ইএসজি উদ্যোগের সম্পৃক্ততা থাকা প্রয়োজন। প্রযুক্তি, বিশেষ করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এই সম্পৃক্তটা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটি খাত যৌথভাবে প্রভাব উদ্যোগে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নুরুন নাহার বলেন, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যবসার ঝুঁকি ও মুনাফার পাশাপাশি তা পরিবেশগত, সামাজিক এবং সুশাসনের মাধ্যমে কতটুক কল্যাণ সাধন করছে, তাও বিবেচনা করেন। এই কারণেই অনেক কোম্পানি এখন আর্থিক বিবরণীর পাশাপাশি তাদের ইম্প্যাক্ট ওয়েটেড স্টেটমেন্ট বা প্রভাব-ভিত্তিক বিবরণী- ও প্রস্তুত করছে। পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়ের প্রসারে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই কম সুদে সবুজ পণ্য ও উদ্যোগে রিফিন্যান্স সহায়তা দিচ্ছে।