
প্রথম পাতা • মিনি কলাম • লিড ৪
ই-কমার্সের শুরুতেই রেগুলেটরি অথরিটি ও পরিচ্ছন্ন নীতিমালা থাকা দরকার ছিলো : ড. আহমদ আল কবির

আমিরুল ইসলাম : রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির বলেন, ই-কমার্স একটি নতুন খাত, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার করেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময়ে ই-কমার্সের মাধ্যমে ভালো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো ব্যবসা-বাণিজ্যের। কিন্তু অপেশাদার ও অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণে এই সময়োপযোগী এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর খাত বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এই খাতকে রক্ষা করার জন্য আমাদের শুরুতেই রেগুলেটরি অথরিটি ও পরিচ্ছন্ন নীতিমালা থাকার প্রয়োজন ছিলো। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে কী কী বিষয় দেখতে হবে তার জন্য চেকলিস্ট তৈরি করে নীতিমালা করা উচিত ছিলো।
আইন করলেই সবকিছু হয় না। আইনের পাশাপাশি নীতিমালা প্রণয়ন এবং কীভাবে এটাকে মূল্যায়ন করা হবে, পরীক্ষা করা হবে ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে এটার স্বচ্ছ নীতিমালা থাকার প্রয়োজন ছিলো যেমন ব্যাংকিং খাতের জন্য আছে বা অন্যান্য ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরের জন্য আছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেরও অন্যান্য খাতের মধ্যে আছে। ই-কমার্সকে মুক্তভাবে ছেড়ে দিলে স্বাভাবিকভাবে বাঁধভাঙার অবস্থা হবে। বিশেষ করে অসৎ ব্যবসায়ীরা অসৎভাবে টাকা আয়ের চিন্তায় এই ব্যবসায় প্রবেশ করে নানা ফাঁদ পাততে পারবে। যেহেতু এটা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর তাই এ খাতে মানুষকে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ যেমন আছে তেমনি মানুষের ক্ষতি করার নানা রকম সুযোগও আছে। গ্রাহকদের মধ্যেও অনেকে অতি লোভের প্রলোভনে এসবের দিকে বেশি বেশি ঝুঁকছে। এতোগুলো প্রতারণার ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও তারা দমেনি। তারা এখনো ঝুঁকি নিচ্ছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, সরকার যেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে সেগুলোকে সাধুবাদ দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমরা দেখতে চাই এর যেন সঠিক বিচার হয়। এই বিচারের মাধ্যমে প্রতারকদের শাস্তির আওতায় আনা হয় বা তাদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে গ্রাহকদের অর্থ উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হয়। ব্যাংক খোলার জন্য একটি গ্রুপকে ৪০০ কোটি টাকা ডিপোজিট রাখতে হয় বা পেইড ক্যাপিটাল হিসেবে রাখতে হয়। কিন্তু ই-কমার্সের জন্য এ জাতীয় কোনো নীতিমালার বালাই নেই। সিকিউরিটি ও ব্যাংক গ্যারান্টি থাকতে হবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের। একটা ছোট এমাউন্ট সিকিউরিটি দেওয়ার পর আসতে আসতে তার ভলিউম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিকিউরিটির পরিমাণও বাড়াতে হবে।
এগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। এটা না করা হলে সেফটি আসবে না। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো যদি এ খাতে এগিয়ে আসে তখনই রেগুলেটরি ফাংশনগুলো অনেক শক্তিশালী হবে। রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ যদি ই-কমার্সের জন্য আলাদাভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় না করে তবে যেসব আইন করা হয়েছে সেগুলো থেকে ফল পুরোপুরি আসবে না। আইনে সংশোধনীর প্রয়োজন হলে সেগুলোও করতে হবে। ই-কর্মাস একটি ভালো খাত। ই-কর্মাসের মাধ্যমে আমাদের উন্নয়নের গতি অনেক ত্বরান্বিত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক সুবিধা হবে। এই খাতে যেই ছাড় দেওয়া হয় এটা তাদের কৌশল। রেগুলেটরি কমিশন থেকে একটি নির্দিষ্ট ছাড় বেঁধে দিতে পারে। এ ধরনের ছাড় দিতে গেলে এর জাস্টিফিকেশন অ্যাপ্রুভ করাতে হবে। এ ধরনের এপ্রোভাল সিস্টেম চালু করতে পারলে গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ কমবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এসব রেগুলেটরি ফাংশনিং নিয়ে কাজ করছে।
আমরা এগুলো করতে পারি এবং বেস্ট প্র্যাকটিসগুলোকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। তিনি আরো বলেন, আইন করে বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নির্ভর করে এ জাতীয় প্রাইভেট সেক্টর অপারেশনগুলোকে রেগুলেট করা যাবে না। শুধু আইন পর্যাপ্ত নয়। এখানে অন্যান্য রেগুলেটরি ফাংশনকে আনতে হবে। আইনের আওতায় আনতে হবে অবশ্যই। অন্যান্য রেগুলেটরি ফাংশনকে এখানে প্র্যাকটিসে আনতে হবে। আরেকটা মনিটরিং ইভ্যালুয়েশন সিস্টেম চালু করতে হবে। ই-কমার্সকে এ জাতীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে না আনলে মাঝেমধ্যেই প্রতারণার বিষয়টি চলে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ ব্যবসায়ীরা কেউ ফেরেশতা নয়। সুযোগ পেলে বেশিরভাগ মানুষই অসৎ দিকে প্রলুব্ধ হবে।
যেরকমভাবে গ্রাহকরাও প্রলুব্ধ হচ্ছে অতিলোভে। অনুরূপভাবে ব্যবসায়ীরাও যারা এই ব্যবসায় আছে তারা যদি অনিয়ন্ত্রিত অবস্থান দেখে তাহলে প্রতারণার সমস্যা বাড়বেই, কমবে না। এখানে একটা মিনিমাম নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। একেবারে কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। প্রতি তিন মাস পর বছরে চারটি রিপোর্ট যদি প্রত্যেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যলেন্স শিট অবস্থা জানালে দেখা যাবে তারা কোন অবস্থানে আছে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে পুলিশ বা আদলতের ওপর নির্ভর না করে সিস্টেমস চালু করতে হবে। সিস্টেমস চালু করলেই এগুলো নিয়ন্ত্রিত হবে এবং দেশে ই-কর্মাস খাত আরো প্রসারিত হবে। ই-কর্মাস একটি বিশাল সম্ভাবনাময় খাত। এই খাতকে আমাদের উৎসাহিত করতে হবে এবং যারা এই খাতকে খারাপ কাজে ব্যবহার করছে তাদের নিরুৎসাহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
