অর্থমন্ত্রী বরাবর চিঠি এবার প্রাপ্ত রপ্তানি আয়ের ওপর নগদ সহায়তা চায় বস্ত্রসহ রপ্তানিমুখী চার সংগঠন
সোহেল রহমান : রপ্তানিতে বিকল্প নগদ সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সব ধরনের জটিলতা দূর করে সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফবিও মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা চায় রপ্তানিমুখী চার সংগঠন। এ বিষয়ে নতুন একটি মাস্টার সার্কুলার জারির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বরাবর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা। এরা হলেনÑ বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক ওসমান, বিকেএমইএ’র সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ও ‘এক্সপোর্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ইএবি)-এর সভাপতি আব্দুস সালাম মোর্শেদী। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত চিঠিতে চার সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, রপ্তানিতে নগদ সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত বিভিন্ন সময়ে জারি করা সার্কুলারগুলোর অস্পষ্টতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, অডিট, স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেদের মত করে সার্কুলারগুলোর ব্যাখ্যা বা অপ-ব্যাখ্যা দেয়ায় নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে রপ্তানিকারকরা নগদ সহায়তা পেতে বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে করে পুরো কারখানা পুঁজি ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমতাবস্থায় বিভিন্ন হয়রানির এড়াতে তুলনামূলক কম দামে বিদেশ থেকে সূতা বা কাপড় আমদানি অধিক সহজ বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। কিন্তু এর ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠা দেশের স্পিনিং মিলসহ পশ্চাৎসংযোগ শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এফই সার্কুলার-২৫-এর কারণে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরো জটিল হয়েছে- এমন দাবি করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বস্ত্রমূল্য নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা বা পদ্ধতি বিদ্যমান নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, তন্তু হইতে সূতা ও পরবর্তী সব পর্যায়ের উৎপাদন বাংলাদেশে সম্পাদিত হইয়াছে এরূপ রপ্তানির জন্যই কেবল নগদ সহায়তা প্রযোজ্য থাকিবে। কিন্তু বর্তমানে নগদ সহায়তা প্রাপ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিসাবায়নের পদ্ধতিটি জটিল করে রাখা হয়েছে। এছাড়া সার্কুলারগুলোতে ব্যবহৃত অপ্রয়োজনীয় কম্পোজিট শব্দটি হয়রানি ও জটিলতা সৃষ্টির আরও একটি অন্যতম কারণ।
এমতাবস্থায় রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্রখাতে বিকল্প নগদ সহায়তা পরিশোধের ক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যা ও হয়রানি নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু করা বিভিন্ন সার্কুলারের শব্দগত জটিলতা ও অস্পষ্টতা দূর করে অন্যান্য সব খাতের মত বস্ত্রমূল্যের পরিবর্তে সরাসরি প্রত্যাবাসিত এফওবি মূল্যের ওপর নগদ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা সম্বলিত নতুন একটি মাস্টার সার্কুলার জারির দাবি জানিয়েছেন চার সংগঠনের নেতারা।
অর্থমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানিখাতে নীটওয়্যার ও তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অপরিসীম। এ খাতের প্রতি সরকারেরও সুনজর ও সহানুভতি রয়েছে। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই প্রথম ২৫ শতাংশ নগদ সহায়তা চালু করা হয়েছিল, যার ফলে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাকখাতের বিশেষ করে নীটওয়্যার খাতের একটি শক্তিশালী পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প গড়ে উঠেছে, দেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের সুতাসহ আনুষঙ্গিক উপরকণ। নীট ও তৈরি পোশাক শিল্পের অবদানের কথা বিবেচনায় রেখে এবং দেশীয় পশ্চাৎসংযোগ শিল্পের বিকাশের স্বার্থে বিগত কয়েকটি বাজেটেই দেশীয় সূতা ব্যবহারের বিপরীতে ৪ শতাংশ হারে বিকল্প নগদ সহায়তাসহ অন্যান্য প্রণোদনা সুবিধা অব্যাহত রেখেছে সরকার। সেজন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে।