অনেকে এখন প্রকাশ্যে ধূমপান করে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনেকে এখন প্রকাশ্যে ধূমপান করে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সুজন কৈরী : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে এক নয়নাভিরাম নির্মল পরিবেশে পথচলা শুরু করলো মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’। মাদকাসক্তদের সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটলো ওয়েসিস’র।
প্রধান অতিথি হিসেবে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়েসিস-এর উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
আইজিপি ও বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে মাদক তৈরি হয় না। কিন্তু আমরা এর ভয়াবহতার শিকার। মাদক থেকে যদি যুবসমাজকে বিরত না রাখি তাহলে এর পরিণতি কী হবে তা আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সবাই জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে সফল হয়েছি। এখন মাদকের বিরুদ্ধেও আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা মাদকাসক্ত তাদের কি হবে? আমরা তাদেরকে চিকিৎসা দিতে চাই, সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাই। তিনি বলেন, পরিবারের কোনও সদস্য মাদকাসক্ত হলে তা গোপন না করে যথাযথ চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এজন্য তিনি পরিবারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, মাদকের সরবরাহ, চাহিদা এবং এর ক্ষতি হ্রাস করার জন্য আমরা কাজ করছি। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তামাকের বিরুদ্ধে আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছিলাম তা মনে হয় মোটামুটিভাবে সফল হয়েছি। এখন প্রকাশ্যে কেউ ধূমপান করে না, সেই দৃশ্যটাও আমরা দেখছি। তামাক যে ক্ষতিকর সেটা মানুষজন জেনে গেছে। সে কারণে অনেকেই তামাক থেকে ফিরে সাধারণ জীবনযাপন করছে।
মাদকের ডিমান্ড, সাপ্লাই এবং ক্ষতি হ্রাস এই তিন ধরনের কাজ করে থাকি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এলাকার যারা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদের কাছে আহ্বান রাখবো, আপনারা সবাইকে উদ্ভুদ্ধ করুন, জানান। মাদক থেকে সবাইকে বিরত রাখতে হবে। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের জানাতে হবে।
দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি রয়েছে। এর বেশিরভাগ শুধুমাত্র মাদক মামলার আসামি বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি ওয়েসিস গড়ার উদ্যোগে শামিল হওয়ার কারণ উল্লেখ করে বলেন, ধনী-গরীব নির্বিশেষে মাদকাসক্ত সদস্যদের নিয়ে পরিবারের দুর্ভোগের ভয়াবহ করুণ চিত্র আমি দেখেছি। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের গোপনে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি। আবার অনেকের মতে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখ। কেউ কেউ বলেন এ সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। এদের চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সাত হাজারের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে কত বছরে আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে পারবো। এসব দিক বিবেচনা করেই আমরা একটি আধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
দেশে মাদক ও মাদকাসক্তি সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আইজিপি বলেন, কোন মাদকই দেশে তৈরি হয় না। ফেন্সিডিল আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে। ইয়াবাও আসে প্রতিবেশী আরেক দেশ থেকে। এখন আবার আসছে আইস। এসবের কোনটিই কিন্তু বাংলাদেশে অভ্যন্তরে তৈরি হয় না। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমরা যে কাজটি করার চেষ্টা করি, তা হচ্ছে মাদকের সাপ্লাই কাট। মাদক দমনে ছয় থেকে সাতটি বাহিনী একসঙ্গে কাজ করে। এছাড়া কাস্টমস বিভিন্ন পোর্টে মাদক দমনে কাজ করে।
তিনি বলেন, দেশে মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে হলে চাহিদা কমাতে হবে। যদি ডিমান্ড থাকে, কোনো না কোনোভাবে দেশে মাদকের সাপ্লাই হবেই। আর মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা যদি হয় এক কোটি, ৮০ লাখ ও ৩৬ লাখ, তাহলে প্রতিদিন মাদক কোনো না কোনোভাবে দেশে প্রবেশ করানোর চেষ্টা হবেই। এ কারণে অবশ্যই আমাদের মাদকের ডিমান্ড কাট করতে হবে। ডিমান্ড কাট করতে হলে এ সমস্ত যারা মাদকাসক্ত আছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওয়েসিস আমাদের অতি ক্ষুদ্র একটি উদ্যোগ।
পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আরেকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র বা হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। সেখানে আমরা ইতোমধ্যে নীদের তীরে ২০ বিঘা জমি কিনেছি। আমি পারলে ১০০ বিঘা জমি কিনতে চাই। সেখানকার পরিবেশে ঢুকলে যেন মানুষের মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। আমরা এমন একটি পরিবেশে ৫০০ থেকে এক হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরি করতে চাই। এটিকে আমরা মাদক চিকিৎসার ক্ষেত্রে রিজিওনাল হাব করতে চাই।
পুলিশ হাসপাতালে ক্যানসার ইউনিট স্থাপনের দাবি জানিয়ে আইজিপি বলেন, আমাদের পুলিশের যে ধরনের কাজ, আমরা সাধারণ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হই। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কিডনির সমস্যা। পুলিশ হাসপাতালে আমরা ইতোমধ্যে ৩৪টি কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করেছি। আরেকটি হচ্ছে হার্টের সমস্যা। আমাদের জব স্ট্রেস থেকে আরেকটি রোগ হয়, তা হলো ক্যানসার। আমাদের প্রচুর লোক আছে যারা ক্যানসারে আক্রান্ত। পুলিশ হাসপাতালে আমরা একটি ক্যানসার ইউনিট চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাবো আগামী বছরের মধ্যে ইউনিট করে দেওয়ার জন্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এটি উদ্বোধন করে দেবেন বলে আশা রাখি।
আইজিপি বলেন, আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর হেলথ ট্যুরিজমে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায়। আমরা যদি বিশেষায়িত হাসপাতাল করে বিদেশ থেকে এক্সপার্টদের নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের এই অর্থ দেশেই থাকবে। দেশে এক্সপার্ট তৈরি হবে। পরে আর বিদেশী এক্সপার্টের প্রয়োজন হবে না।